ফ্যাসিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রামের গল্প বললেন মির্জা ফখরুল

ফ্যাসিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রামের গল্প বললেন মির্জা ফখরুল

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ গুলশানের চেয়ারম্যান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গত ১৬ বছর ধরে দেশের মানুষ একটি ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই, সংগ্রাম, শহীদ হওয়া, আহত হওয়া ও গুম হওয়ার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেছে। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশের মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে তিনটি নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে এবং গণতন্ত্রকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে। একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকার সকল নির্যাতনমূলক পন্থা অবলম্বন করেছে।

তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করা হয়েছে এবং রাষ্ট্রযন্ত্রকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থনীতির লুটপাট, বিদেশে টাকা পাচার, ব্যাংক লুট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের আধিপত্য বিস্তার, শেয়ারবাজার লুট এবং মাফিয়া শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অভিযোগও তিনি তুলেছেন।

ফখরুল বলেন, বিএনপি শুরু থেকেই এসব অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে দেশনেত্রী বেগম খালেদার নেতৃত্বে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। সরকার তাদের ৬০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে সাজানো মিথ্যা মামলায় ১০ বছর সাজা দিয়ে ৬ বছর কারাগারে আটক রাখা হয়, যেখান থেকে তিনি ৫ আগস্ট মুক্তি পেয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলের শীর্ষ নেতাদেরও মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার ও সাজা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, অনেক নেতা আজীবন কারাদণ্ড পেয়েছেন, কারাগারে অনেকে মারা গেছেন। সরকারের উদ্দেশ্য বিএনপিকে নেতৃত্বশূন্য করে ধ্বংস করা ছিল। এসব নির্যাতনের বিরুদ্ধে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

ফখরুল ইসলাম বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনা ৫ আগস্ট পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এই অভ্যুত্থান মানুষের মাঝে নতুন আশা সৃষ্টি করেছে এক নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের।

তিনি আরও জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ইউনুসের নেতৃত্বে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো সংস্কারের জন্য সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়। গত ৫ আগস্ট জুলাই ঘোষণাপত্র ঘোষণা করা হয়।

বিএনপি এই ঘোষণাপত্রকে স্বাগত জানিয়ে বিশ্বাস করে, এতে রাজনৈতিক দলগুলো যে অঙ্গীকার করেছে তা বাস্তবায়িত হলে একটি নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। ফখরুল বলেন, সাম্য, মানবিক মূল্যবোধ ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে একটি প্রগতিশীল ও সমৃদ্ধ দেশ নির্মাণ সম্ভব হবে। তিনি যারা এই সংগ্রামে শহীদ, আহত ও পঙ্গু হয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

বিএনপি লন্ডনে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ইউনুসের বৈঠকের পর নির্বাচনের সময় ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি নির্ধারণকে স্বাগত জানায়। ফখরুল মনে করেন, এই ঐতিহাসিক ঘোষণা দেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটিয়ে গণতন্ত্রের উন্নয়নের পথ সুগম করবে।

তিনি বলেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। বিএনপি সব রাজনৈতিক দল ও জনগণকে একসাথে এসে নির্বাচন সফল করার আহ্বান জানায়।

বিএনপি আবারো গণতন্ত্রের লড়াইয়ে প্রাণ হারানো শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে, আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করে এবং শহীদদের পরিবারের পূর্ণবাসন ও সুচিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়।

ফখরুল শেষ করেন বিএনপি’র দীর্ঘ সময়ের সফল নেতৃত্বের জন্য ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ধন্যবাদ দিয়ে এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ইউনুসসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্র কাঠামোর বাকি সংস্কারকাজ দ্রুত সম্পন্ন করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে।

তিনি সকলকে একত্রিত হয়ে শহীদ জিয়ার স্বপ্নের, বেগম খালেদার সংগ্রাম-গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ ও তরুণ নেতা তারেক রহমানের আধুনিক ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *