মোহাম্মদপুরে ছিনতাই, পুলিশের গড়িমসি — ভুক্তভোগীর ফেসবুক পোস্টে তোলপাড়

মোহাম্মদপুরে ছিনতাই, পুলিশের গড়িমসি — ভুক্তভোগীর ফেসবুক পোস্টে তোলপাড়

গরাজধানীর মোহাম্মদপুরে ছিনতাইয়ের শিকার এক ভুক্তভোগী সাংবাদিক থানায় গিয়ে সহযোগিতা চাইলেও থানার পুলিশ সদস্যদের গড়িমসি, অবহেলা এবং অসৌজন্যমূলক আচরণে হতাশ হয়ে ফেসবুকে প্রকাশ করেন নিজের অভিজ্ঞতা। সেই স্ট্যাটাস ভাইরাল হলে আলোচনার ঝড় ওঠে সামাজিক মাধ্যমে। ঘটনাটি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট ৪ পুলিশ সদস্যকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে উপ-পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।

ভুক্তভোগী আহমাদ ওয়াদুদ নিজের ফেসবুক পোস্টে জানান, ২৪ জুলাই রাত ১১টার দিকে মোহাম্মদপুর তিন রাস্তার মোড়ে ছিনতাইকারীদের হাতে তিনি আক্রান্ত হন। ছিনতাইকারীরা তার মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ ও কিছু নগদ অর্থ ছিনিয়ে নেয় এবং তাকে চাপাতি দিয়ে আঘাতও করে। যদিও আঘাত গুরুতর ছিল না, তবে মানসিকভাবে তিনি ও তার স্ত্রী চরম ভীতির মধ্যে পড়ে যান।

ঘটনার মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে তিনি স্ত্রীসহ মোহাম্মদপুর থানায় উপস্থিত হয়ে ডিউটি অফিসার এসআই জসিমের কাছে অভিযোগ জানান। কিন্তু অফিসারের পক্ষ থেকে কোনো তাৎক্ষণিক সহযোগিতা না পেয়ে হতাশ হন তিনি। বরং এক সাদা পোশাকধারী পুলিশ সদস্য অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন এবং অভিযোগ নেয়ার বিষয়ে গড়িমসি করেন।

তিনি নিজেই কাগজ ও কলম সংগ্রহ করে অভিযোগ লিখে জমা দেন, কিন্তু তার কোনো কপি দেয়া হয়নি। বরং তাকে একটি ফোন নম্বর দিয়ে বলা হয়, এএসআই আনারুল বর্তমানে অন্য জায়গায় ব্যস্ত রয়েছেন এবং তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।

পরবর্তীতে ভুক্তভোগী আহমাদ ওয়াদুদ পুলিশের অনীহার পরও নিজে থেকেই তিনটি পয়েন্ট ঘুরে এএসআই আনারুলের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তাকে নিয়ে গাড়িতে করে ঘটনার স্থানে যান। ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর কিছু দুরে বসে থাকা সন্দেহভাজন ছিনতাইকারীদের তিনি নিজেই চিহ্নিত করে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন।

কিন্তু অবাক করার মতো বিষয় হলো—ভুক্তভোগীর স্পষ্ট শনাক্ত করার পরও এএসআই আনারুল সেই জায়গায় না গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে অন্য কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ওই সময় ভুক্তভোগী আবারও আনারুলকে ছিনতাইকারীদের দেখিয়ে তাদের দিকে এগিয়ে যেতে অনুরোধ করেন। কিন্তু তবুও তিনি নড়লেন না এবং কোনো তৎপরতা দেখালেন না।

ফলে ছিনতাইকারীরা বুঝতে পেরে ধীরে ধীরে ঘটনাস্থল থেকে সরে যায় এবং কোনো বাধা ছাড়াই পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। পুরো সময় জুড়ে পুলিশ সদস্যদের এই নিষ্ক্রিয়তা ও অনাগ্রহ দেখে ভুক্তভোগী হতবাক হয়ে যান।

ওই স্ট্যাটাসে বর্ণিত ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে। বিষয়টি পুলিশ সদর দপ্তরের নজরে এলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। ইতোমধ্যে এসআই জসিম, এএসআই আনারুল, কনস্টেবল নুরুন্নবী ও কনস্টেবল মাজেদুল ইসলাম– এই চার পুলিশ সদস্যকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে ডিএমপি অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছে।

বাংলাদেশ পুলিশ এক বিবৃতিতে ঘটনার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করে জানায়, ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়েছে এবং ঘটনার সাথে জড়িত তিনজন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এ ঘটনার মাধ্যমে পুলিশের জবাবদিহিতা ও নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আরও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠে এসেছে বিভিন্ন মহল থেকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *