
গোপালগঞ্জে ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির (এনসিপি) আয়োজিত গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার দুপুরে শহরের পৌর উন্মুক্ত মঞ্চে আয়োজিত “মার্চ টু গোপালগঞ্জ” শীর্ষক সমাবেশ শুরুর আগেই সংঘবদ্ধভাবে হামলা চালানো হয়। এতে এখন পর্যন্ত চারজন নিহত এবং পুলিশসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে জেলা প্রশাসন।
সমাবেশের প্রাক্কালে উত্তেজনা
“দেশ গড়ার জুলাই মার্চ” নামে এনসিপির মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১৭ জুলাই গোপালগঞ্জে সমাবেশ আয়োজনের ঘোষণা দেওয়া হয়। সকাল থেকেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে থাকলেও সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উলপুর এলাকায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা হয় এবং তাদের গাড়িবহরে আগুন দেওয়া হয়।
বহুগামী হামলা ও রাস্তা অবরোধ
পরবর্তীতে গোপালগঞ্জের বিভিন্ন পয়েন্টে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা একাধিক মিছিল বের করে। কানসুর বাসস্ট্যান্ড ও কোটালীপাড়ায় সড়ক অবরোধ, গাছ ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ও হামলার ঘটনা ঘটে। দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে সমাবেশ মঞ্চে এনসিপির আগমনের ঠিক আগ মুহূর্তে “জয় বাংলা” স্লোগান দিয়ে ৫০-৬০ জনের একটি দল সশস্ত্রভাবে হামলা চালায়। তারা ব্যানার ও চেয়ার ভাঙচুর করে, বোমা ও দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে আতঙ্ক ছড়ায়।
বোমা বিস্ফোরণ, আগুন, প্রাণহানি
দুপুর ২:১৫ মিনিটে সাতপাড়া বাজার এলাকায় দুটি বোমা বিস্ফোরণ ঘটে এবং দুটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বর্বর হামলাকারীরা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ওপর ইট-পাথর ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ চালায়। হামলায় এক পুলিশ পরিদর্শকসহ বহু সদস্য আহত হন। গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারসহ একাধিক সরকারি স্থাপনাতেও হামলা হয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ ও কারফিউ
পরে পুলিশ ও যৌথ বাহিনী এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের নিরাপদে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে স্থানান্তর করে। বিকাল ৫টার দিকে তারা বাগেরহাট হয়ে খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। রাত সাড়ে ৭টায় একটি উগ্র দল গোপালগঞ্জ জেলা হাসপাতাল থেকে নিহতদের মরদেহ নিয়ে যায় এবং চিকিৎসকদের ময়নাতদন্তে বাধা দেয়।
পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে
গোপালগঞ্জে বর্তমানে বিজিবি, সেনাবাহিনী ও অতিরিক্ত ১,৫০৭ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ২০ জনকে আটক করা হয়েছে এবং সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি এখন শান্ত ও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।