ডেস্ক নিউজ , দেশীবার্তা।

চট্টগ্রাম বন্দর রাষ্ট্রীয় মালিকানায় রেখে দক্ষতা ও দুর্নীতিমুক্তভাবে বন্দর কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরিচালনার আহ্বান জানিয়েছেন বক্তারা। তাঁরা বলেন, এই বন্দর কোনোভাবেই বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে ইজারা দেওয়া যাবে না। সরকার যদি দেশবিরোধী ও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন করার মতো কর্মকাণ্ড থেকে সরে না আসে, তবে ৫ আগস্ট ‘গণ–অভ্যুত্থান দিবস’ পালনের পর আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
আজ শনিবার চট্টগ্রাম বন্দর ফটকের সামনে সমাপ্ত হওয়া রোডমার্চ–উত্তর এক সমাবেশে এই সব কথা বলেন বক্তারা।
ঢাকা থেকে শুরু হওয়া দুই দিনের রোডমার্চ শেষে বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে বামধারার বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নিয়ে গঠিত ‘সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দেশপ্রেমিক জনগণ’ প্ল্যাটফর্মের ব্যানারে চট্টগ্রাম পৌঁছায় কর্মসূচিটি। পথে পথে বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ শেষে শেষ সমাবেশ হয় বন্দর এলাকায়।
সমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘এক মুহূর্তও দেরি না করে সরকারকে ঘোষণা দিতে হবে—চট্টগ্রাম বন্দর ইজারা দেওয়া হবে না। রাষ্ট্রের মালিকানায় এবং বন্দর কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এই বন্দর পরিচালিত হবে, দক্ষ ও দুর্নীতিমুক্তভাবে।’ তিনি আরও অভিযোগ করেন, সরকার এমন কিছু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছে, যেগুলোর আলোচনা তাদের ঘোষিত সংস্কারের কাঠামোর মধ্যেও নেই।
চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের নয়, রাষ্ট্রের অধীনেই পরিচালিত হোক: রোডমার্চের সমাপনী সমাবেশে বক্তারা
চট্টগ্রাম বন্দরকে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা দেওয়ার পরিকল্পনার বিরোধিতা করে সমালোচনামুখর হন দেশের বাম রাজনৈতিক জোটের নেতারা। তাঁদের দাবি, বন্দর লাভজনক একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, এটিকে কোনওভাবেই বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া যাবে না।
শনিবার বিকেলে চট্টগ্রাম বন্দর ফটকের সামনে ‘সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দেশপ্রেমিক জনগণ’ প্ল্যাটফর্মের ব্যানারে আয়োজিত সমাপনী সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। ঢাকা থেকে শুরু হওয়া দুই দিনের রোডমার্চের এটি ছিল শেষ কর্মসূচি। বিভিন্ন স্থানে পথসভা শেষে বিকেল পৌনে পাঁচটায় রোডমার্চটি চট্টগ্রামে এসে পৌঁছায়।
বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, “ওই যে বন্দর ভবন দেখা যাচ্ছে, এটি কি সংস্কারের আওতায় ছিল? না, ছিল না। তাহলে হঠাৎ করেই ইজারার প্রসঙ্গ কেন উঠল? চট্টগ্রাম বন্দর লোকসানি নয়, এটি একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান। তা সত্ত্বেও কেন এটার নিয়ন্ত্রণ বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে?”
তিনি আরও বলেন, নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালটি ১৭ বছর ধরে কার্যকর রয়েছে এবং সেখানে বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে কেনা যন্ত্রপাতি রয়েছে। তবুও সেটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ডের হাতে তুলে দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। এ প্রক্রিয়া আওয়ামী লীগ সরকারের সময় শুরু হলেও বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেটিকে এগিয়ে নিচ্ছে। নভেম্বরের মধ্যে এ বিষয়ে চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
রুহিন হোসেন করিডর ইস্যু নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “রোহিঙ্গা সমস্যায় ভুক্তভোগী চট্টগ্রামের মানুষ। জাতিসংঘের মহাসচিব বহুপক্ষীয় সমাধানের কথা বলেছিলেন, কিন্তু তা হয়নি। এখন আবার শোনা যাচ্ছে রাখাইনের ভেতর দিয়ে করিডর বা চ্যানেল দেওয়া হবে। সেখানে যুদ্ধ চলছে, আর সেই যুদ্ধক্ষেত্রে করিডর মানেই বাংলাদেশকে সাম্রাজ্যবাদী সংঘাতে জড়ানো। এটা আমরা কোনোভাবেই মেনে নেব না।”
সমাবেশে বক্তারা জানান, চারটি মূল দাবিকে কেন্দ্র করে এই রোডমার্চ আয়োজন করা হয়:
- চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনায় বিদেশি হস্তক্ষেপ রোধ
- স্টারলিংক ও করিডরের মাধ্যমে বাংলাদেশকে সাম্রাজ্যবাদী সংঘাতে জড়ানোর পরিকল্পনা বাতিল
- বিভিন্ন সরকারের আমলে স্বাক্ষরিত সকল গোপন চুক্তি প্রকাশ
- জাতীয় স্বার্থবিরোধী অসম চুক্তিগুলো বাতিল
সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের হাতে ছিল বিভিন্ন স্লোগানসংবলিত প্ল্যাকার্ড, যেমন— ‘বন্দর-করিডর, বিদেশিদের দেব না’, ‘স্টারলিংকের সঙ্গে চুক্তি বাতিল কর’, ‘জাতীয় স্বার্থবিরোধী সকল অসম চুক্তি বাতিল কর’, এবং ‘সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও’।
চট্টগ্রামের সমাবেশে সহস্রাধিক নেতা–কর্মী অংশ নেন। এতে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম জেলা সিপিবির সভাপতি অশোক সাহা এবং সঞ্চালনায় ছিলেন বাসদের জেলা ইনচার্জ আল কাদেরি জয়।
বক্তব্য দেন আরও অনেক বাম নেতা, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন— বাসদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের ইকবাল কবির জাহিদ, গণতান্ত্রিক বাম জোটের মাসুদ রানা, গণমুক্তি ইউনিয়নের নাসিরউদ্দিন আহম্মদ, বিপ্লবী পার্টির মোশরেফা মিশু, সাম্যবাদী আন্দোলনের আহ্বায়ক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী এবং বাংলাদেশের সোশ্যালিস্ট পার্টির শহিদুল ইসলাম।
বক্তারা সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেন, যদি দেশবিরোধী ও সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের যেকোনো পরিকল্পনা থেকে সরকার পিছু না হটে, তাহলে ৫ আগস্ট ‘গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ পালন শেষে আরও কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
ঢাকা থেকে শুরু হওয়া দুই দিনব্যাপী রোডমার্চ শুক্রবার রাতের দিকে ফেনীতে পৌঁছায়। শনিবার সকালে সেখানে একটি মিছিল ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি মহীপাল হয়ে ফেনী শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে এসে শেষ হয়, যেখানে পরবর্তী সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়।
রোডমার্চের মূল স্লোগান ছিল: ‘মা, মাটি, মোহনা—বিদেশিদের দেব না’।
ফেনী থেকে যাত্রা করে রোডমার্চ পরবর্তী গন্তব্য মিরসরাইয়ে পৌঁছায় এবং সেখানে আরও একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর রোডমার্চ চট্টগ্রাম বন্দরের ৪ নম্বর ফটকে এসে পৌঁছায় এবং সেখানেই এ কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। সমাপ্তি উপলক্ষে আয়োজন করা হয় প্রধান সমাবেশ, যেখানে বক্তারা বিদেশি হস্তক্ষেপ ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী নানা বিষয়ে বক্তব্য দেন।