
আলোকস্বল্পতা নয়, আঁধারে ঢাকা হারের গল্প! চার দিনের মধ্যেই সিলেট টেস্টে জিম্বাবুয়ের কাছে হারলো বাংলাদেশ
বৃষ্টি বারবার আশার সংকেত দিলেও শেষ পর্যন্ত নামে না। আলোকস্বল্পতায় খেলা বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনাও ছিল, কিন্তু সেটিও এড়ানো যায়। শেষ পর্যন্ত সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে কৃত্রিম আলোর নিচে টেস্টের চতুর্থ দিনের শেষ বিকেলে ৩ উইকেটে হেরে যায় বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়ে জয়ের স্বপ্ন জাগিয়েছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তবে সেই স্বপ্ন ভেঙে দেন ওয়েসলি মাধেভেরে, যিনি রিভার্স সুইপে মিরাজের বল বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে জিম্বাবুয়েকে এনে দেন বহু প্রতীক্ষিত জয়।
২০২১ সালের পর এটিই জিম্বাবুয়ের প্রথম টেস্ট জয়। ১৭৪ রানের লক্ষ্য তারা করে ৭ উইকেট হারিয়ে জয় তুলে নেয় দলটি, যা তাদের টেস্ট ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়। এর আগে ১৯৯৮ সালে পেশোয়ারে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৬২ রান তাড়া করে পাওয়া জয় ছিল রেকর্ড।
এই জয়ে কেবল ম্যাচ নয়, ইতিহাসও নতুন করে লিখলো জিম্বাবুয়ে।
১৭৪ রান খুব কঠিন লক্ষ্য ছিল না, কিন্তু শুরুতেই পথ হারায় বাংলাদেশ
চতুর্থ ইনিংস হলেও সিলেটের উইকেটে ১৭৪ রান তাড়া করা অসম্ভব কিছু ছিল না। টেস্টের চতুর্থ দিন হলেও কন্ডিশন রান তোলার পক্ষে ছিল। তবে জিম্বাবুয়ের অতীতে এত বড় রান তাড়া করে জয়ের নজির না থাকায় অনেক বাংলাদেশি সমর্থকের মনে আশা জেগেছিল।
কিন্তু সেই আশার মাটি করে দেয় জিম্বাবুয়ের ওপেনিং জুটি। ব্রায়ান বেনেট ও বেন কারেন ৯৫ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়ে মূল চাপটাই সরিয়ে দেন। বেনেট ফিফটি করে দলের ভিত গড়ে দেন, আর কারেন করেন ৪৪ রান। দুজনকেই ফেরান মেহেদী হাসান মিরাজ, যিনি পরে ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়েও জয় এনে দিতে পারেননি দলকে।
মিরাজের সঙ্গে তাইজুলও নিয়মিত বিরতিতে উইকেট তুলে নিলেও জয়ের জন্য তা যথেষ্ট হয়নি। শেষ পর্যন্ত মিরাজের টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় ১০ উইকেটের কীর্তিও সান্ত্বনা হয়েই রয়ে গেল।
তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে আরও কিছু রান যোগ হলে কি ফলটা অন্যরকম হতে পারত না? ব্যাটারদের ব্যর্থতাই হয়তো গড়ে দিয়েছে এই হারের ব্যবধান।
অধিনায়কের ভুলে দিনের শুরু, ব্যাটিং ব্যর্থতায় ম্যাচের ইতি
সিলেট টেস্টের চতুর্থ দিনে দিনের শুরুটা ছিল বাংলাদেশের জন্য চরম হতাশাজনক। প্রথম বলেই চাপে পড়ে যান অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ব্লেসিং মুজারাবানির বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ে ফাঁদে পড়েন তিনি। দিনের প্রথম বলটি ইয়র্কার দিয়ে অপ্রস্তুত করার পর দ্বিতীয় বলেই বাউন্সার দেন মুজারাবানি, আর তাতেই পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন আগের দিন ৬০ রানে অপরাজিত থাকা নাজমুল।
এরপরও ভুলের ধারা বজায় রাখে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ। মেহেদী হাসান মিরাজ ঝলক দেখালেও বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ হন। এক চার ও এক ছক্কায় শুরু করে শেষমেশ গালিতে ক্যাচ তুলে দেন মুজারাবানির বলেই।
মাঝে ফিফটি করেন জাকের আলী অনিক, তবে তাঁর ইনিংসেও বিতর্কের জায়গা ছিল। ইনিংসের শেষদিকে বোলার হাসান মাহমুদকে বারবার স্ট্রাইক দেওয়া নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। ৫৮ বল খেলে হাসান মাত্র ১২ রান করেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওয়েলিংটন মাসাকাদজার বলে ছক্কা মারতে গিয়ে আউট হন। অন্যপ্রান্তে থাকা খালেদ আহমেদ ফেরেন প্রথম বলেই।
২৪৮ রানে ৯ উইকেট হারানো বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ২৫৫ রানে। শেষ উইকেটে মাত্র ৭ রান যোগ হয়।
তবুও, জাকের আলীর ৫৮ রানের ইনিংসটির আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম চার ম্যাচেই ফিফটি করা প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটার তিনি। তবে দুর্ভাগ্য এই যে, এই ব্যক্তিগত কীর্তির দিনেই তাঁকে দেখতে হলো দলের পরাজয়।