
মার্কিন নাগরিকের সঙ্গে প্রতারণা, হুন্ডি কার্যক্রম পরিচালনা এবং স্বর্ণ চোরাচালানের মাধ্যমে প্রায় ৬০৮ কোটি টাকা মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) একটি মামলা দায়ের করেছে। মামলায় এজাহারনামীয় ছয়জনসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন মনীন্দ্র নাথ বিশ্বাস, ওয়াহিদুজ্জামান, গোলাম সারওয়ার আজাদ, তরিকুল ইসলাম ওরফে রিপন ফকির, রাজীব সরদার এবং উজ্জ্বল কুমার সাধু।
এই মামলার সূত্রপাত ঘটে একজন মার্কিন নাগরিক ডেবোরাহ জন্সটন রামলো ‘ডেবি’-এর সঙ্গে সংঘটিত আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ থেকে। অভিযোগ অনুযায়ী, প্রতারকচক্র DEA পরিচয় দিয়ে তার কাছ থেকে ২,২২,০০০ মার্কিন ডলার আত্মসাৎ করে। এই অর্থ তারা বাংলাদেশে অবস্থিত বিভিন্ন শিক্ষার্থীর মাধ্যমে পাঠাতে বাধ্য করে এবং বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের কাছ থেকে বিভিন্ন নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক একাউন্টে টাকা গ্রহণ করে। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে হুন্ডি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে এই চক্রটি।
সিআইডির অনুসন্ধানে উঠে আসে, অভিযুক্তরা আইনক্স ফ্যাশন, ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজ, জামান এন্টারপ্রাইজ এবং নোহা এন্টারপ্রাইজ নামক প্রতিষ্ঠানের নামে একাধিক ব্যাংক একাউন্ট খুলে বিপুল পরিমাণ জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত লেনদেন করেছে। এছাড়া মনীন্দ্র নাথ বিশ্বাসের ব্যক্তিগত একাউন্টেও অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
তদন্তে আরও জানা যায়, অভিযুক্তরা মধ্যপ্রাচ্য থেকে আগত ব্যক্তিদের এবং ঢাকার তাঁতীবাজারসহ বিভিন্ন দোকান থেকে ভাঙ্গারি স্বর্ণ সংগ্রহ করে তা গলিয়ে সোনার বার তৈরি করে সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার করেছে। এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে তারা প্রায় ৬০৮ কোটি টাকার সম্পদ হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তর করে ভোগ-বিলাসে ব্যবহার করেছে এবং নামে-বেনামে সম্পত্তির মালিক হয়েছে। এসব কর্মকাণ্ড মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।
ফলস্বরূপ, ডিএমপি কোতয়ালী থানায় ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (সংশোধিত ২০১৫) অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হয়। মামলার তদন্ত অব্যাহত রয়েছে এবং অজ্ঞাতনামা অন্যান্য আসামিদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে।