
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) / ঢাকা, ২৮ সেপ্টেম্বর: গত ১৯ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় সংঘটিত সহিংসতা, রাস্তা অবরোধ এবং হামলার ঘটনাকে ‘সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংগঠনের একটি বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ’ বলে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতির মাধ্যমে সেনাবাহিনী এই পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করে।
সেনাবাহিনীর দাবি, ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এবং এর অঙ্গসংগঠনসমূহ পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে সুপরিকল্পিতভাবে এসব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে।
ধর্ষণ ও সেনাসদস্যদের ওপর হামলার ঘটনা
সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়, গত ২৩ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ির সিঙ্গিনালা এলাকায় এক স্কুলছাত্রীর ধর্ষণের অভিযোগ আমলে নিয়ে তাদের সহযোগিতায় সন্দেহভাজন শয়ন শীলকে ২৪ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার করা হয় এবং আইনি প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। শয়ন শীলকে গ্রেফতার করা সত্ত্বেও ইউপিডিএফের অঙ্গসংগঠন পিসিপি নেতা উখ্যানু মারমা ‘জুম্ম ছাত্র জনতার’ ব্যানারে বিক্ষোভ ও অবরোধের ডাক দেন। একই সময় দেশে ও বিদেশে অবস্থানরত ব্লগার এবং পার্বত্য অঞ্চলের কিছু ব্যক্তি অনলাইনে বাঙালিদের উদ্দেশ্য করে অপপ্রচার ও উস্কানিমূলক বক্তব্য দেন।
সেনাবাহিনী অভিযোগ করে, গত ২৬ সেপ্টেম্বর অবরোধ চলাকালে ইউপিডিএফের প্ররোচনায় উশৃঙ্খল এলাকাবাসী টহলরত সেনাদলের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে, এতে তিনজন সেনা সদস্য আহত হন। সার্বিক পরিস্থিতি এবং উসকানির বিষয়টি বিবেচনা করে সেনাবাহিনী অত্যন্ত ধৈর্য্য ও সংযমের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে এবং বল প্রয়োগ থেকে বিরত থাকে।
অস্ত্র থেকে গুলিবর্ষণ ও ১৪৪ ধারা ভঙ্গ
বিবৃতিতে বলা হয়, ২৭ সেপ্টেম্বর ইউপিডিএফ কর্মীরা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টির চেষ্টা চালায় এবং গুলি, ভাঙচুর ও অ্যাম্বুলেন্সে আক্রমণ করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায়, যা দ্রুত পাহাড়ি-বাঙালির সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার রূপ নেয়। অবস্থা বিবেচনা করে খাগড়াছড়ি ও গুইমারা এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। সেনাবাহিনী, বিজিবি ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সারারাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আজ (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে ইউপিডিএফ ও এর অঙ্গসংগঠনসমূহ গুইমারা উপজেলার রামসু বাজার এলাকায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাস্তা অবরোধ করে। এ সময় তারা দেশীয় অস্ত্র, ইট-পাটকেল ও লাঠিসোটা নিয়ে সেনাবাহিনীর ওপর হামলা চালায়, এতে ০৩ জন অফিসারসহ ১০ জন সেনা সদস্য আহত হন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, সংঘর্ষ চলাকালীন আনুমানিক ১১:৩০ ঘটিকার দিকে রামসু বাজারের পশ্চিম দিকের উঁচু পাহাড় থেকে ইউপিডিএফ (মূল) সশস্ত্র দলের সদস্যরা ৪/৫ বার অটোমেটিক অস্ত্র দিয়ে আনুমানিক ১০০-১৫০ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে, এতে ঘটনাস্থলে অনেকে গুলিবিদ্ধ হন। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর তৎপরতায় সশস্ত্র দলটি দ্রুত এলাকা ত্যাগ করে। একই সময়ে রামসু বাজার ও ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
ষড়যন্ত্রের প্রমাণ এবং শান্তির আহ্বান
সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ইউপিডিএফ সুপরিকল্পিতভাবে এলাকার মহিলা ও স্কুলগামী শিশুদের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণে বাধ্য করছে এবং বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দেশীয় অস্ত্রসহ পার্বত্য অঞ্চলে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আজ বিকালে বিজিবির কাপ্তাই ব্যাটালিয়ন ইউপিডিএফের সন্ত্রাসী সংগঠন কর্তৃক পরিবহনকৃত বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র যাত্রীবাহী বাস হতে জব্দ করেছে।
সেনাবাহিনী পার্বত্য অঞ্চলের সকল জাতিগোষ্ঠীর রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও জনসাধারণকে সংযত আচরণ করার আহ্বান জানিয়ে সকল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করেছে। সেনাবাহিনী পুনর্ব্যক্ত করেছে, সকল অপপ্রচার সত্ত্বেও তারা বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য এই অংশের অখন্ডতা ও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।