
গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের ৭৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ঢাকার চীনা দূতাবাস এক বিশাল সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এই অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ভিডিও বার্তার মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানান। এছাড়া অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সালাহউদ্দিন আহমেদ এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সারওয়ার ফারুকী অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খানসহ ৬০০-এর বেশি অতিথি উপস্থিত ছিলেন। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি, বিদেশী কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, গণমাধ্যমের সদস্য এবং থিংক ট্যাংক বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন।
চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন তার বক্তব্যে বলেন, ২০২৫ সাল শুধু চীনের ৭৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী নয়, এটি জাতিসংঘের ৮০তম বার্ষিকীও। তিনি বলেন, চীন বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী দেশ হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করেছে। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে দেশটি চরম দারিদ্র্য দূরীকরণে এক অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে এবং এটি বিশ্ব শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি।
রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, গত পাঁচ দশক ধরে চীন ও বাংলাদেশ ভালো প্রতিবেশী, আন্তরিক বন্ধু এবং নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে একে অপরের পাশে থেকেছে। উভয় দেশ একে অপরের প্রতি সম্মান, আন্তরিকতা, কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন এবং পারস্পরিক সহযোগিতা বজায় রেখেছে। তিনি বলেন, চীন বাংলাদেশের আধুনিকায়নের যাত্রায় পাশে থাকতে এবং একটি নতুন অধ্যায় লিখতে প্রস্তুত।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তার ভিডিও বার্তায় চীনকে তাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, চীন দারিদ্র্য দূরীকরণ, প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং জনগণের সেবার মতো ক্ষেত্রে অসামান্য সাফল্য অর্জন করেছে। তিনি চীনকে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করেন এবং বাংলাদেশের প্রতি চীনের দীর্ঘদিনের সহযোগিতা ও সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই সম্পর্ক দুই দেশের মানুষের মধ্যে শান্তি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, চীন অবকাঠামো, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং স্বাস্থ্যসেবার মতো ক্ষেত্রগুলোতে বাংলাদেশের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সারওয়ার ফারুকী বলেন, দুই দেশের জনগণের মধ্যে একটি গভীর বন্ধন স্থাপিত হয়েছে এবং চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি ছিল উৎসবমুখর ও উষ্ণ পরিবেশে পরিপূর্ণ। অনুষ্ঠানে ইউন্নান গোল্ডেন অ্যান্ড সিলভার বার্ড আর্ট ট্রুপ এবং কুয়ানঝু আর্ট ট্রুপের সদস্যরা নৃত্য, অ্যাক্রোব্যাটিক্স এবং ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে দর্শকদের মুগ্ধ করেন। অনুষ্ঠানে চীন ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি এবং জাপানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে চীনা জনগণের বিজয়ের ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে একটি ফটো প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়। এর পাশাপাশি, একাধিক থিমভিত্তিক স্টল ছিল, যেখানে শিল্প প্রদর্শনী, পর্যটন প্রচার এবং সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হয়, যা অতিথিদের দারুণভাবে আকর্ষণ করে।