
আসন্ন দুর্গাপূজার সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে হিন্দু ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সোমবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন যমুনায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় হিন্দু নেতারা প্রধান উপদেষ্টাকে পূজামণ্ডপ পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানান।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তিনি সবসময় সকলের সঙ্গে দেখা করতে আগ্রহী এবং পূজা উপলক্ষে বছরে একবার সরাসরি কথা বলার সুযোগ হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই এক পরিবার।’ এই বক্তব্য হিন্দু ধর্মীয় নেতাদের মনে গভীর অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে বলে তারা জানান।
প্রধান উপদেষ্টা দুর্গাপূজা ঘিরে কোনো ষড়যন্ত্রের সুযোগ যাতে তৈরি না হয়, সে বিষয়ে সকলকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।
হিন্দু ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর সারাদেশে এক হাজারেরও বেশি পূজামণ্ডপ বেড়েছে এবং পূজার প্রস্তুতি পুরোদমে চলছে। তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সহযোগিতায় সন্তোষ প্রকাশ করে বিশেষ করে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সচিবকে ধন্যবাদ জানান। নেতারা আশা প্রকাশ করেন, গত বছরের মতো এবারও নির্বিঘ্নে পূজা উদযাপিত হবে।
বৈঠকে নেতারা আরও জানান, গত বছর প্রধান উপদেষ্টা ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনে গিয়ে বলেছিলেন, নিরাপত্তা বাহিনী দিয়ে কড়া পাহারা বসিয়ে পূজা হবে এমন দেশ তিনি চান না। এই ধরনের সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দেখছেন বলে নেতারা উল্লেখ করেন।
বৈঠকে মহানগরের পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব স্থায়ী দুর্গামন্দিরের জন্য রেল মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জায়গা বরাদ্দ দেওয়ায় প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান। তিনি এটিকে একটি ‘ঐতিহাসিক ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘ধর্ম মন্ত্রণালয় সকল ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করে। কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে আমরা কল্যাণকর কর্মসূচিগুলো নিশ্চিত করি। মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে একটি মন্দির করে দেওয়া হচ্ছে। আরেকটি মন্দিরে স্নানাগারের জন্য সিড়ি করে দেওয়া হচ্ছে। যেসকল অস্বচ্ছল মন্দির প্যাগোডা, গির্জা রয়েছে তাদেরকে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি। অস্বচ্ছল ব্যক্তি বিশেষ করে বিধবা নারীদের জন্য আমরা সহায়তা দেওয়া সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
আজকের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদার ও সচিব দেবেন্দ্র নাথ উঁরাও, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী পূর্ণাআনন্দ (একক), বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর, মহানগর পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজ সংস্কার সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, শ্রী শ্রী গীতা হরি সংঘ দেব মন্দিরের সভাপতি শ্রী বিমান বিহারী তালুকদার, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মহাসচিব এস এন তরুণ দে, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন ফ্রন্টের আহ্বায়ক অপর্না রায় দাস, শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র দত্ত ও সিদ্ধেশ্বরী সার্বজনীন পূজা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রণীতা সরকার।