
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান আজ মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌরসভা মিলনায়তনে বিভিন্ন পেশাজীবী প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময়কালে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, সৎ নেতৃত্ব যদি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে, তাহলে পাঁচ বছরেই দেশের চিত্র পাল্টে যাবে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “আমরা একটা ভালো নির্বাচন আশা করছি। সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সৎ নেতৃত্ব আসলে পাঁচ বছরেই দেশ বদলে যাবে, ইনশাআল্লাহ।” তিনি সকলকে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান এবং শহীদদের রক্তের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা না করার উপর জোর দেন। তিনি বলেন, “শহীদদের রক্তের অমর্যাদা হয় এমন কোনো নির্বাচন আমরা দেখতে চাই না। শহীদদের রক্তের মর্যাদা রাখতে একটি সুন্দর, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অবশ্যই হতে হবে।”
অন্যান্য দেশের হস্তক্ষেপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “নির্বাচনে বাইরের দেশের হস্তক্ষেপ বাংলাদেশের জনগণের কাম্য নয়। আমরাও অন্য দেশের কোনো বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে চাই না। আমরা সবাইকে বন্ধু হিসেবে দেখতে চাই।”
নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে জামায়াত আমীর বলেন, তিনি এই উপজেলার সন্তান। তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মিথ্যা মামলা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, যদিও সেই সময় তার বয়স এত ছিল না এবং তিনি কোনো সংগঠনের সাথে সেভাবে যুক্ত ছিলেন না। জামায়াতে ইসলামীর আমীর হওয়ায় তাকে যুদ্ধাপরাধী বানানোর চেষ্টা করা হয়েছিল, যা কুলাউড়ার কোনো মানুষই সমর্থন করেনি। এই জন্য তিনি কুলাউড়াবাসীর কাছে আজীবন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বলেন, “কারা আমাকে যুদ্ধাপরাধী বানাতে চেয়েছিল—সব জানি। কিন্তু প্রতিশোধ নেব না। প্রতিহিংসা আর প্রতিশোধ যদি নিতেই থাকি, তাহলে সমাজ একটা অসুরের সমাজে পরিণত হবে। একটা মানবিক সমাজ আর বানাতে পারবো না।” তবে তিনি অপরাধীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবিতে বলিষ্ঠ থাকার কথা জানান।
ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, দুর্নীতি এবং সিন্ডিকেট চিহ্নিত করে সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারলে দেশের বিদ্যমান সম্পদ দিয়েই বাংলাদেশকে পরিবর্তন করা সম্ভব। তিনি কুশিক্ষার জায়গায় সুশিক্ষা ফিরিয়ে আনা এবং আকাশ অপসংস্কৃতির কারণে পরিবারে আসা অস্থিরতা দূর করার উপর জোর দেন। নৈতিকতার ভিত্তিতে শিক্ষা কারিকুলাম তৈরির গুরুত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যদি দেশের শিক্ষা কারিকুলাম ও মডিউল নৈতিকতার ভিত্তিতে তৈরি হয়, তাহলে শিক্ষা পূর্ণতা পাবে।”
ট্যাক্সের টাকার সঠিক ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, “ভিক্ষুক থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ধনী ব্যক্তি পর্যন্ত সবাই ট্যাক্স দেয়। সেই ট্যাক্সের টাকা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ নানা উন্নয়নমূলক কাজে সরকার ব্যয় করে।” তিনি উল্লেখ করেন যে, সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি ইট, বালি, পাথরের সাথে দেশের ১৮ কোটি মানুষের ঘাম জড়িত। যদি শিক্ষিতদের মধ্যে এই নৈতিক দায়বদ্ধতা প্রতিষ্ঠা করা যেতো, তাহলে ঘুষ নেওয়ার সময় তাদের হাত-পা কাঁপতো। এই নৈতিক দায়বদ্ধতা শিক্ষা ব্যবস্থায় যুক্ত করতে পারলে শিক্ষিত সমাজ জাতির সম্পদে পরিণত হবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌরসভা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই মতবিনিময় সভায় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, সিলেট মহানগর আমির মো. ফখরুল ইসলাম, জেলা নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুর রহমান, জেলা সেক্রেটারি মো. ইয়ামির আলী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জেলার সভাপতি মাওলানা আব্দুল কুদ্দুসসহ বিভিন্ন পেশার বিপুল সংখ্যক প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।