
এক বছরের মাথায়ও দেশে গুম, খুন ও ধর্ষণের ঘটনার বিচার নিশ্চিত করতে না পারায় জনগণের সামনে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ।
রবিবার বিকেলে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার’ ঘোষণার সমাবেশে আবেগঘন এক বক্তব্যে তিনি বলেন,
“আমরা অনেক কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, অনেক স্বপ্ন দেখিয়েছিলাম, কিন্তু কিছুই বাস্তবায়ন করতে পারিনি। আজ আমরা জনগণের কাছে ক্ষমা চাইছি।”
সমাবেশের শুরুতেই তিনি স্মরণ করিয়ে দেন—এক বছর আগে এই শহীদ মিনার থেকেই ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন তারা। তখন ঘোষণা দিয়েছিলেন একটি মানবিক, ন্যায়নিষ্ঠ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার। কিন্তু এক বছরের মাথায় দাঁড়িয়ে তিনি স্বীকার করেন—”আমরা ব্যর্থ হয়েছি, প্রতিশ্রুতি রাখতে পারিনি।”
তিনি বলেন,
“আমরা এমন একটি রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখিয়েছিলাম যেখানে গুম থাকবে না, খুন থাকবে না, ধর্ষণ ও রাজনৈতিক দমন থাকবে না। কিন্তু আজও সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। বরং অনেকের স্বপ্ন আমরা নিজেরাই ভেঙে দিয়েছি।”
বক্তব্যের এক পর্যায়ে আবদুল হান্নান মাসউদ একে একে স্মরণ করেন:
- বিডিআর বিদ্রোহে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের পরিবার
- সীমান্তে গুলিবিদ্ধ হয়ে কাঁটাতারে ঝুলে থাকা ফেলানী
- র্যাবের গুলিতে পা হারানো লিমন
- গুম হওয়া নেতা ইলিয়াস আলী ও নজরুল আজমীর পরিবার
- ধর্ষণের শিকার সেই নারী, যার ভাই এনসিপির আন্দোলনে শহীদ হয়েছিলেন
তিনি বলেন,
“আমি ক্ষমা চাই ফেলানীর কাছে, যাকে রাষ্ট্র রক্ষা করতে পারেনি। আমি ক্ষমা চাই লিমনের কাছে, যে কৈশোরেই পা হারিয়েছে। আমি ক্ষমা চাই ইলিয়াস ও আজমীর পরিবারের কাছে, যারা আজও প্রিয়জনের ফিরে আসার আশায় দিন গুনছেন। আমি ক্ষমা চাই সেই ধর্ষিত বোনের কাছে, যার ভাই আমাদের মুক্তির জন্য জীবন দিয়েছিল, অথচ আমরা তাকে ন্যায়বিচার দিতে পারিনি।”
তিনি বলেন,
“আমরা এমন একটি রাষ্ট্র চেয়েছিলাম যেখানে মানুষ ভয়মুক্ত হয়ে মতপ্রকাশ করতে পারবে। কিন্তু সেই রাষ্ট্র আজও বাস্তবে আসেনি। বরং আমরা সবাই মিলে জনগণের স্বপ্নভঙ্গ ঘটিয়েছি। এই ব্যর্থতার দায় আমাদেরই নিতে হবে।”
সমাবেশের শেষে তিনি জনগণের প্রতি একটি বিনীত আহ্বান জানান—আবারও নতুন করে চেষ্টা করার, আবারও মানুষের পক্ষে দাঁড়ানোর।
“আমরা ব্যর্থ হয়েছি, কিন্তু থেমে যাইনি। আমরা আবারও চেষ্টা করব, তবে এবার সত্যিকারের জনগণের সঙ্গে থেকে।”