ভালো খাবার শেষে তিমিও গান গায়

ভালো খাবার শেষে তিমিও গান গায়
whalesingafterFood- whaleNews
নীল তিমিফাইল ছবি

ভালো খাবার পেলে যেমন মানুষের মন ভালো হয়ে যায়, তেমনি তিমিরাও খাবার শেষে আনন্দে গান গায়! শুধু তাই নয়, তাদের সেই গান পিয়ানোর সুরের মতোই মধুর হতে পারে। সম্প্রতি এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে, যা বিস্ময়কর হলেও সত্য।

গবেষণার বিস্তারিত

সংবাদমাধ্যম দ্য কনভারসেশন পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, খাবারের মান ভালো হলে তিমিরা বিশেষ ধরনের সুরেলা শব্দ করে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া উপকূলে ছয় বছর ধরে চালানো এই গবেষণার ফলাফল সম্প্রতি পিএলওএস ওয়ান সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, তিমিরা শুধু আনন্দ বা যোগাযোগের জন্যই নয়, তাদের বাস্তুসংস্থানে পরিবর্তন হলে সেটির প্রতিফলনও তাদের গানে পাওয়া যায়। অর্থাৎ, পরিবেশের পরিবর্তন বা খাদ্যপ্রাপ্তির পার্থক্য তাদের সুরের ধরনেও প্রভাব ফেলে।

এ আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি তিমির আচরণ বুঝতে সাহায্য করবে এবং সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থানের পরিবর্তনের পূর্বাভাস দিতেও কাজে আসতে পারে।

প্রশান্ত মহাসাগরের উত্তর-পূর্বাঞ্চল তিমির অন্যতম প্রধান খাবারের উৎস। প্রতি বছর বংশবিস্তারের জন্য তিমিরা এখান থেকে হাজার মাইল দূরে যাত্রা করে, আর সেই দীর্ঘ পথচলায় খাবার না খেয়েই টিকে থাকে। তাই যাত্রার আগে তারা পেটভরে খাবার সংগ্রহ করে, যা তাদের বংশবিস্তার ও লালন-পালনের শক্তি জোগায়। পরে বসন্ত বা গ্রীষ্মকালে আবার নিজেদের পরিচিত অঞ্চলে ফিরে আসে।

তিন ধরনের তিমির গানের তথ্য

গবেষণায় নীল তিমি, হামব্যাক তিমি এবং ফিন তিমির গানের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
🔹 নীল তিমি: শুধু ‘ক্রিল’ নামের চিংড়িজাতীয় ছোট মাছ খায়।
🔹 হামব্যাক তিমি: ক্রিলের পাশাপাশি অ্যাংকোভি মাছের ঝাঁক থেকেও খাবার সংগ্রহ করে।
🔹 ফিন তিমি: খাদ্যাভ্যাসে বৈচিত্র্য রয়েছে।

তবে খাবারের প্রাচুর্য প্রতি বছর একই থাকে না। এর পরিবর্তনের সঙ্গে তিমির গানেরও সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।

গবেষণার পর্যবেক্ষণ

গবেষণাটি শুরু হয়েছিল ২০১৫ সালে, যখন উত্তর-পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে দীর্ঘস্থায়ী তাপপ্রবাহ চলছিল। এতে তিমিসহ অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর খাদ্যসংকট দেখা দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে:
🔹 তাপপ্রবাহ চলাকালে তিন প্রজাতির তিমিই সবচেয়ে কম গান গেয়েছিল।
🔹 পরবর্তী দুই বছর খাবারের প্রাচুর্য ফিরে আসায় তিমির গানও বেড়ে যায়।

তিমির গান ও খাবারের সম্পর্ক

এই পর্যবেক্ষণের পর বিজ্ঞানীরা অতীতের তথ্য বিশ্লেষণ করেন এবং দেখতে পান, গত ৫০ বছরে যেখানে অ্যাংকোভি মাছের সংখ্যা বেড়েছে, সেখানে হামব্যাক তিমির গানের হারও বেড়েছে।

এ সম্পর্কের আরও প্রমাণ পাওয়া যায় তিমির ত্বকের বিশ্লেষণে। অ্যাংকোভি মাছ খাওয়ার কারণে তাদের ত্বকে নির্দিষ্ট পরিবর্তন দেখা গেছে। একইভাবে, নীল তিমির ক্ষেত্রেও গবেষণায় তাদের খাবারের সঙ্গে গানের সম্পর্ক স্পষ্টভাবে পাওয়া গেছে।

এ গবেষণা তিমির আচরণ বুঝতে এবং সামুদ্রিক বাস্তুসংস্থান পরিবর্তনের প্রভাব বিশ্লেষণে নতুন দিক উন্মোচন করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *