
ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলা চালানোর পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, এসব কেন্দ্র “সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে” এবং তেহরান যদি শান্তির পথে না চলে, তাহলে আরও ভয়াবহ হামলার মুখোমুখি হতে হবে।
হোয়াইট হাউস থেকে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প এই অভিযানে যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণকে “ব্যতিক্রমী সামরিক সাফল্য” বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, “ফোর্ডো, নাটানজ ও ইসফাহানের মতো পারমাণবিক স্থাপনাগুলো আজ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এখন ইরানের উচিত শান্তির পথে হাঁটা।”
ট্রাম্প আরও বলেন, “যদি তারা তা না করে, তাহলে ভবিষ্যতের হামলা হবে আরও বড়, আরও সরল।”
এর আগে তিনি ট্রুথ সোশ্যাল-এ পোস্ট করে জানান, ফোর্ডোতে ‘বোমার পূর্ণ পেলোড’ ফেলা হয়েছে। হামলায় ব্যবহৃত বিমান বা অস্ত্রের ধরন তিনি প্রকাশ করেননি, তবে মার্কিন সামরিক সূত্র জানায়, বি-২ বোমারু বিমান এই অভিযানে অংশ নেয়, যেগুলো বিশেষ করে ‘বাঙ্কার-বাস্টার’ বোমা বহনে সক্ষম।
এ হামলার খবর ইরানি মিডিয়াও নিশ্চিত করেছে। তারা জানিয়েছে, ফোর্ডো, নাটানজ ও ইসফাহানের বিভিন্ন অংশে বিস্ফোরণ ঘটেছে।
হামলার পরপরই ট্রাম্প ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলেন। নেতানিয়াহু এ অভিযানের জন্য ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানান এবং বলেন, “আমেরিকা সত্যিই অতুলনীয়।”
এদিকে, ইরানের রাষ্ট্রপতি মাসুদ পেজেশকিয়ান আগেই হুঁশিয়ার করেছিলেন, ইসরায়েলের লাগাতার বোমা হামলা অব্যাহত থাকলে ইরানের জবাব হবে আরও বিধ্বংসী। তিনি আবারও জোর দিয়ে বলেন, ইরান কোনোভাবেই তার শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করবে না।
ইসরায়েল শনিবার দাবি করেছে, তারা দ্বিতীয়বারের মতো ইসফাহানে হামলা চালিয়েছে। আন্তর্জাতিক পারমাণবিক সংস্থা জানিয়েছে, সেন্ট্রিফিউজ তৈরির একটি ওয়ার্কশপে আঘাত লেগেছে।
রবিবার ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী জানায়, তারা ইসরায়েলের বিভিন্ন কৌশলগত স্থাপনায় আত্মঘাতী ড্রোন হামলা চালিয়েছে।
অন্যদিকে, ইয়েমেনের ইরানপন্থী হুথি গোষ্ঠী হুমকি দিয়েছে—যদি যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধের সম্পূর্ণ অংশ হয়ে ওঠে, তাহলে তারা আবারও লোহিত সাগরে মার্কিন জাহাজ লক্ষ্য করে আক্রমণ চালাবে।
এপর্যন্ত ইরানে কমপক্ষে ৬৫০ জনেরও বেশি নিহত হয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমের বরাতে জানা গেছে, যাদের মধ্যে ২৬০ জনের বেশি ছিলেন বেসামরিক মানুষ।
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুধুমাত্র ইসরায়েলি হামলায় ৪০০ জনের বেশি নিহত হয়েছে। অপরদিকে, ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলায় ইসরায়েলে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ২৫ জন।
যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট নেতা হাকিম জেফ্রিস এই ঘটনায় ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করে বলেন, “তিনি আমেরিকাকে এমন একটি যুদ্ধের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন, যা মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘমেয়াদী বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।”
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ইতোমধ্যেই সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় চলে গেছে এবং আপাতত শুধু প্রয়োজনীয় সামরিক কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দিয়েছে।