ট্রাইব্যুনালে উঠে এল শেখ হাসিনার গুলির নির্দেশনার অডিও

ট্রাইব্যুনালে উঠে এল শেখ হাসিনার গুলির নির্দেশনার অডিও

গত বছরের ৫ আগস্ট ঢাকা মহানগরীর চানখাঁরপুল এলাকায় একটি গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে ছয়জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা দায়ের করা হয় এবং গত সোমবার মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।

চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম তার সূচনা বক্তব্যে প্রধান প্রমাণ হিসেবে একটি অডিও রেকর্ড তুলে ধরেন, যেখানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামালের মধ্যে গত বছরের ১৪ জুলাই একটি টেলিফোন কথোপকথন রয়েছে। ওই কথোপকথনে শেখ হাসিনা আন্দোলন দমনের জন্য সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগের নির্দেশনা দেন এবং ছেলেমেয়েদের আন্দোলন থামাতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। কথোপকথনে হত্যাকাণ্ডের প্রস্তুতি ও পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রাখার বিষয়ে আলোচনা হয়।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, ডিএমপি ও পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তারা—বিশেষ করে ডিএমপির তৎকালীন কমিশনার হাবিবুর রহমান—এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। চিফ প্রসিকিউটর অভিযোগ করেন, ওই সময় হাবিবুর রহমান গুলির মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগের নির্দেশনা দিয়েছিলেন। ডিএমপির বেতার বার্তায় পুলিশ সদস্যদের সতর্ক থাকার পাশাপাশি প্রয়োজন হলে গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

ঘটনায় নিহতদের মধ্যে একজন ছিলেন ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থী শাহারিয়ার খান আনাস। তার বাবা ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য প্রদান করেন এবং জানান, ছেলের মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়নি। রক্তাক্ত অবস্থায় মরদেহ ‘শহীদি মর্যাদায়’ দাফন করা হয়।

মামলায় মোট আটজন আসামি রয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন পলাতক অবস্থায় রয়েছে, এবং বাকিরা কারাগারে আছেন। বিচার কার্যক্রম এখন শুরু হয়েছে এবং আসামিদের জবানবন্দি গ্রহণ ও সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।

এছাড়া, মামলায় অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার শাহ্ আলম মোহাম্মদ আখতারুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল, শাহবাগ থানার পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ আরশাদ হোসেনসহ অন্যান্য পুলিশের কর্মকর্তার নামও যুক্ত রয়েছে। এই মামলার বিচার তিন সদস্যের একটি ট্রাইব্যুনালে হচ্ছে, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার।

চানখাঁরপুল হত্যাকাণ্ড মামলার এই বিচার কার্যক্রমের মাধ্যমে সাম্প্রতিক গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত সহিংসতার দায়ের দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও দৃষ্টিকোণ স্থাপন করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *