সিরিয়ায় ইসরায়েলি ড্রোন হামলা , দামেস্কে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে বিস্ফোরণ

সিরিয়ায় ইসরায়েলি ড্রোন হামলা , দামেস্কে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে বিস্ফোরণ

সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে অবস্থিত প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তর ও প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের আশপাশে ইসরায়েল সামরিক ড্রোন হামলা চালিয়েছে, যা দেশটির যুদ্ধ পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে। দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর সুইদায় দ্রুজ যোদ্ধা ও সিরীয় সরকারি বাহিনীর মধ্যে চলমান রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর এই হামলা ঘটে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বুধবার এক বিবৃতিতে জানান, দামেস্কে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রবেশপথে হামলা চালানো হয়েছে। সুইদা থেকে সরকারি বাহিনী প্রত্যাহার না করলে আরও জোরালো হামলার হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

আল জাজিরার রিপোর্টার ওসামা বিন জাভেদ দামেস্ক থেকে জানান, তিনি মন্ত্রণালয়ের সামনে ও পেছনে দুটি ড্রোন হামলা প্রত্যক্ষ করেছেন। এসময় আকাশে ড্রোন ঘোরাফেরা করতে দেখা যায় এবং গুলির শব্দ শোনা যায়। রিপোর্টার বলেন, “এই হামলা স্পষ্ট করছে, ইসরায়েল এখন সিরিয়ার হৃদয়ে আঘাত হানছে।”

সুইদা শহরে গত কয়েকদিন ধরেই চলছিল সংঘর্ষ। বুধবার সরকার ঘোষিত বিরতি চুক্তি ব্যর্থ হওয়ার পর ফের ভয়াবহ রক্তপাত শুরু হয়। সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, ‘আইনের বাইরে থাকা’ কিছু গোষ্ঠী প্রথমে আক্রমণ করে, এরপর সেনারা পাল্টা জবাব দেয়।

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পর্যবেক্ষকদের মতে, ইতোমধ্যেই সুইদায় ২৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে রয়েছে ৪ শিশু, ৫ নারী এবং ১৩৮ জন সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য। আহত হয়েছে দুই শতাধিক মানুষ। বহু মানুষ শহর ছেড়ে পালিয়ে গেছে।

দ্রুজ ও বেদুইন সম্প্রদায়ের মধ্যে চলমান দীর্ঘস্থায়ী বিরোধই এই সহিংসতার মূল উৎস। বিশেষ করে, সম্প্রতি এক দ্রুজ ব্যবসায়ীর অপহরণ ও হত্যা নিয়ে টানাপড়েনের জেরেই নতুন করে দাঙ্গা শুরু হয়।

এই পরিস্থিতির মধ্যে ইসরায়েলের সীমান্তে উত্তেজনা চরমে। বহু ইসরায়েলি দ্রুজ যুবক সীমান্ত অতিক্রম করে সিরিয়ায় প্রবেশ করেছে দ্রুজদের সহায়তার জন্য। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “আমি ইসরায়েলের দ্রুজ জনগণকে বলছি— দয়া করে সীমান্তে যাবেন না। এতে আপনি অপহরণের শিকার হতে পারেন এবং সেনাবাহিনীর অভিযান বাধাগ্রস্ত হবে।”

ইসরায়েল আরও জানিয়েছে, তারা সুইদাগামী ট্যাংক, রকেট লঞ্চার ও ভারী অস্ত্রবাহী গাড়িতে টার্গেট করে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে।

এদিকে সিরিয়ার নতুন সরকার ও প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শরাআ এই হামলাকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন এবং রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ বলে উল্লেখ করেছেন। বিভিন্ন আরব দেশ ও আন্তর্জাতিক সংগঠনও এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ সংঘাত আরও গভীরতর আকার নিতে পারে। কারণ ইসরায়েল এখন প্রকাশ্যেই এক পক্ষের হয়ে হস্তক্ষেপ করছে, যা মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *