
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপিত সম্পূরক শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে এনেছে। এই সফল কূটনৈতিক অর্জনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে সাধুবাদ জানিয়েছে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। তবে একই সঙ্গে চুক্তির শর্তাবলি ও এর বিনিময়ে দেওয়া প্রতিশ্রুতি প্রকাশের দাবিও তুলেছেন তারা।
বিএনপির প্রশংসা ও সতর্ক মন্তব্য
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আজ একটা ভালো খবর আছে। আপনারা দেখেছেন কয়েকদিন আগে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের রপ্তানি পণ্যের ওপর ৩৫% শুল্ক আরোপ করেছিল। এটি এখন কমে ২০ শতাংশে এসেছে, যা একটি বড় অগ্রগতি। এ জন্য আমি অন্তর্বর্তী সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।”
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “এই সিদ্ধান্ত আপাতদৃষ্টিতে সন্তোষজনক। তবে পুরো সমঝোতা সম্পর্কে আমাদের স্পষ্ট ধারণা নেই। আমরা জানতে চাই, শুল্ক কমানোর বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রকে কী প্রতিশ্রুতি বা সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এটা তো শুধু শুল্কের বিষয় নয়, এর পেছনে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বাস্তবতা রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “বোয়িং বিমান কেনা এবং অন্যান্য সিদ্ধান্তের সঙ্গে এই শুল্ক সমঝোতা সম্পর্কযুক্ত কি না, তা স্পষ্ট হওয়া দরকার।”
জামায়াতের প্রতিক্রিয়া
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, “আলহামদুলিল্লাহ, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্তে আমরা কৃতজ্ঞ। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।”
তবে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “যদি সত্যিই কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে, তাহলে সরকারের উচিত তা জনসম্মুখে প্রকাশ করা। জনগণই রাষ্ট্রের মালিক।”
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “এই অগ্রগতি প্রশংসনীয়, তবে আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত শুল্ক আরও কমানো এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরও ফলপ্রসূ আলোচনায় যাওয়া।”
এনসিপির অভিমত
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “এটি অন্তর্বর্তী সরকারের বড় কূটনৈতিক সাফল্য। গার্মেন্ট খাত বাংলাদেশের অন্যতম রপ্তানি খাত, যেখানে কোটি মানুষ কর্মরত। এই শিল্প রক্ষায় শুল্ক কমানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।”
দলটির এসএমই উইংয়ের সদস্য আকরাম হোসেন বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে ৩৫ শতাংশ শুল্ক থাকলে গার্মেন্ট শিল্প ধসে পড়ত। এখন যেহেতু আমাদের শুল্ক ২০ শতাংশে নেমেছে, তা ভারতের (২৫%) ও পাকিস্তানের (১৯%) কাছাকাছি হওয়ায় আমাদের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান তৈরি হয়েছে।”
চুক্তি প্রকাশের আহ্বান
বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের নেতারা শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও এর বিনিময়ে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বা কূটনৈতিক চুক্তিগুলো জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন। তারা বলছেন, “জনগণের স্বার্থেই এসব চুক্তির শর্তাবলি জানা প্রয়োজন।”