মোঃ তোফায়েল আহমদ , শান্তিগন্জ উপজেলা প্রতিনিধ, ১৪মে২০২৫, বুধবার।

টাকা নিয়েও কম্বাইন হারভেস্টার না দেওয়া এবং একযন্ত্র একাধিকজনকে দিয়ে সরকারের ভর্তুকির বরাদ্দ তুলে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। কৃষি অধিদপ্তর বিতরণকৃত হারভেস্টার মাঠে আছে কি না জানতে চাইলে বেরিয়ে আসে এই তথ্য।
জানা যায়, শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের কৃষক মছদ্দর আলী ২০২১—২২ অর্থ বছরে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে একটি কম্বাইন হারভেস্টার বরাদ্দ পান। চুক্তি অনুযায়ী কোম্পানীর অনুকূলে পাঁচ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করেন তিনি। ২০২২ সালের ১৬ জুন পুরাতন একটি কম্বাইন হারভেস্টার হস্তান্তরের জন্য নিয়ে আসে এসকিউ কোম্পানীর লোকজন। মছদ্দর আলী তাদের বলেন, আমাকে নতুন মেশিন দেওয়ার কথা, আপনারা পুরাতন মেশিন আমাকে দিতে চাচ্ছেন কেন? কয়েকদিন পরেই আরেকটি নতুন মেশিন কোম্পানীর লোকজন কৃষক মছদ্দর আলীর বাড়িতে দিয়ে যায়। ওই বছর আমন মৌসুমে ধান কাটার জন্য মেশিনটি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের সাক্তারপাড় গ্রামে নিয়ে গেলে বিকল হয়ে যায়। কোম্পানীর লোকজনকে তিনি বিষয়টি জানালেও ৩ বছর ধরে এটি পরিত্যাক্ত অবস্থায় আছে। এসকিউ কোম্পানী মছদ্দর আলীকে পরবতীর্তে যে মেশিন দেয় সেটিও কাগজে কলমে সদর উপজেলার কাঠইর ইউনিয়নের গোলেরগাঁও গ্রামের আরজ আলীর ছেলে কৃষক আব্দাই মিয়াকে ২০২২ সালের ১৬ জুন বিতরণ দেখায়।
মেশিন দেখাতে না পারায় গত ১৬ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকতার্ স্বাক্ষরিত নোটিশে আব্দাই মিয়াকে সরকারি ভতুর্কি মূল্যের ২২ লক্ষ ৫ হাজার টাকা সরকারি কোষাগারে চালানের মাধ্যমে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে জমা দেওয়ার নিদের্শ প্রদান করেন। অন্যদিকে ২৩ এপ্রিল সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের সাক্তারপাড় গ্রামের আবুল খায়েরের বাড়িতে পরিত্যাক্ত মেশিন জব্দ করেন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকতার্।
এ সময় আবুল খায়ের জানান, তার নিকট আত্মীয় শান্তিগঞ্জ উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের মছদ্দর আলীর ছেলে আব্দুল হামিদ মেশিনটি দীর্ঘদিন আগে ধান কাটার জন্য আমাদের বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন, মেশিনটি আনার পর পরই নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আর ধান কাটতে পারেননি। এরপর থেকেই এখানে মেশিনটি পরিত্যাক্ত অবস্থায় রয়েছে। ঘটনাস্থলে শান্তিগঞ্জ উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের মছদ্দর আলীর ছেলে আব্দুল হামিদকে উপস্থিত হওয়ার জন্য বলা হলে তারা প্রয়োজনীয় সকল ডকুমেন্ট নিয়ে উপস্থিত হন। কাগজপত্র দেখে দায়িত্বরত কর্মকতার্ মেশিনটি সদর উপজেলার কৃষক আব্দাই মিয়ার বলে জানান।
মছদ্দর আলীর ছেলে আব্দুল হামিদ কৃষি কর্মকতার্কে বলেন, ২০২২ সালে এসকিউ কোম্পানী আমার বাবার নামে শান্তিগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে একটি মেশিন দিয়েছিল, কিন্তু সেটি পুরাতন ও নষ্ট ছিলো, তাই সে সময় আমরা এই মেশিন গ্রহণ না করে ফেরত দিয়েছি। ২—৩দিন পর আমাদেরকে এই মেশিনটি দিয়েছে এসকিউ কোম্পানীর লোকজন। কিন্তু এই মেশিনটি ঐ বছরই আমন মৌসুমে আমার আত্মীয় আবুল খায়েরের বাড়িতে নিয়ে আসলে মেশিনটি নষ্ট হয়ে যায়। পরে কোম্পানীর লোকজনের সাথে অনেকবার যোগাযোগ করে কোন লাভ হয়নি।
সদর উপজেলার কৃষক আব্দাই মিয়ার ভাই দিলোয়ার মিয়া বলেন, এসকিউ কোম্পানী আমাদের সাথে প্রতারণা করেছে। একটি মেশিন দুইটি উপজেলায় বিতরণ দেখিয়ে সরকারের ভতুর্কির টাকা ও আমাদের টাকা আত্মসাৎ করেছে। আমি বহুবার তাদের সাথে যোগাযোগ করেছি। তারা আজ না কাল এমন করে করে ৩ বছর অতিবাহিত করে আমার মেশিনটি না দিয়ে আরেকজনকে বিতরণ করেছে।
পরে কৃষক আব্দাই মিয়া সুনামগঞ্জ জজ কোর্টের মাধ্যমে এসকিউ কোম্পানীর চেয়ারম্যান এ,জে,এম, শফি উদ্দিন ও বিক্রয় প্রতিনিধি সিলেট জোনের এজিএম আশফাক আহমদ, সিলেট—সুনামগঞ্জ অঞ্চলের সেলস ম্যানেজার মিনহাজ আল হক ও কোম্পানীর রিকভারী অফিসার আতিকুর রহমান আতিকের বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করেন। এরপরে শান্তিগঞ্জ উপজেলার কৃষক মছদ্দর আলী উপজেলা কৃষি কর্মকতার্, সুনামগঞ্জ কৃষি অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বরাবরে অভিযোগ প্রদান করেন।
অভিযোগের পরেই এসকিউ কোম্পানীর লোকজন গত ৬ মে রাত ৮টায় শান্তিগঞ্জ উপজেলার কৃষক মছদ্দর আলীর বাড়িতে পুরাতন জরাজীর্ণ একটি কম্বাইন হারভেস্টার হস্তান্তর করতে চাইলে কৃষক মছদ্দর আলী ও তার ছেলে আব্দুল হামিদ মেশিনটি গ্রহণ করেননি। আশপাশের লোকজন কোম্পানীর লোকজনদের আটক করে রাখে। পরে কৃষি কর্মকতার্র মধ্যস্থতায় গ্রহীতা ও কোম্পানীর লোকজনের সাথে রাতে বৈঠক হয়। কৃষি কর্মকতার্ ৩ দিনের মধ্যে মছদ্দর আলীর নামীয় ইঞ্জিন নম্বর ও চেসিস নম্বর সম্বলিত মেশিনটি হস্তান্তর করার জন্য এসকিউ কোম্পানীর লোকজনকে বলেন। কিন্ত এখনো পর্যন্তু মেশিনটি বিতরণ করতে পারেনি এসকিউ কোম্পানী।
এ ব্যাপারে কৃষক মছদ্দর আলী জানান, কৃষি কর্মকতার্ ৩ দিনের মধ্যে মেশিন আমাকে হস্তান্তর করার জন্য কোম্পানীর লোকদের বললেও এখন তারা হস্তান্তর করেনি। আমি আমার নতুন মেশিন ফেরত সহ ক্ষতিপূরণ চাই।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কাঠইর ইউনিয়নের গোলেরগাঁও গ্রামের কৃষক আব্দাই মিয়ার ভাই দিলোয়ার হোসেন জানান, ২০২২ সালে আমি ও আমার ভাই আব্দাই মিয়া সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সরকারি ভতুর্কি মূলে ২টি হারভেস্টার মেশিন পাওয়ার জন্য তালিকাভুক্ত হই। এই বছরের ১৬ জুন তারিখে আমরা দুই ভাইয়ের চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর নিয়ে একটি মেশিন হস্তান্তর করে এসকিউ কোম্পানী। বিগত ৩ বছরেও আমার ভাইয়ের নামের মেশিনটি এসকিউ কোম্পানী হস্তান্তর করেনি। সম্প্রতি উপজেলা কৃষি কর্মকতার্ আমার ভাই আব্দাই মিয়ার নামে নোটিশ দিয়ে বলেন, আপনার কাছে সরকারের ৭০% ভতুর্কি মূল্যের কৃষিযন্ত্র কম্বাইন হারভেস্টার পাওয়া না যাওয়ায় সরকারি চালান মোতাবেক ২২ লক্ষ ৫ হাজার টাকা জমা দিতে বাধ্য, অন্যথায় আপনার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এসকিউ কোম্পানীর সিলেট অঞ্চলের এজিএম আশফাক আহমদ কৃষক মছদ্দর আলীর মেশিন প্রসঙ্গে বলেন, প্রথমে তারা জানিয়েছে মেশিনটি নষ্ট হয়ে গেছে, পরে এই মেশিনটি মেরাতমের জন্য আমরা