ঢাকার শেরাটন হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান আগামী জাতীয় নির্বাচন ঘিরে একগুচ্ছ গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা ও অভিমত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের উচিত জুলাই মাসের মধ্যে একটি রাজনৈতিক সমঝোতা চূড়ান্ত করে তা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কার শেষ করা।
তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে হালনাগাদ ও নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রকাশের সময় এসেছে, যেখানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অন্তর্ভুক্ত করাও অত্যন্ত জরুরি।
ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, “আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করা সরকারের দায়িত্ব। আমরা আশা করি, নির্বাচন কমিশন তাদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখবে এবং জনগণের আস্থা অর্জন করবে।”
সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠনের প্রতিনিধি এবং নাগরিক সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারত, রাশিয়া, চীন, ফ্রান্সসহ বহু দেশের প্রতিনিধিরা এই আয়োজনে অংশ নেন।
প্রাক্তন মন্ত্রী, আলেম সমাজ, সাংবাদিক, শিক্ষক, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, এবং জামায়াতের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি না থাকায় জনগণ নানাভাবে ভোগান্তিতে পড়ছে। তাই জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া প্রয়োজন।
জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশনের সব শর্ত মেনে নিবন্ধন করা হলেও তা পরবর্তীতে রাজনৈতিক চাপে বাতিল করা হয়েছিল। তবে ২০২৫ সালের ১ জুন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়কে অবৈধ ঘোষণা করে এবং পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা দেয়।
তিনি আরও বলেন, “জুলাই-আগস্টের গণআন্দোলনের মাধ্যমেই আজকের এই পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। যাঁরা শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন, তাঁদের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।”
তিনি সাবেক আমীর প্রফেসর গোলাম আযম প্রণীত কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতির সফলতার উল্লেখ করে বলেন, “১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচন এই ব্যবস্থার অধীনেই সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তা বাতিল করে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হয়েছে।”
ডা. শফিকুর রহমান আশা প্রকাশ করে বলেন, “আমরা শিগগিরই আমাদের দলীয় নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরিয়ে পাবো। আমরা গণতান্ত্রিক, মানবিক ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যুবসমাজের মাধ্যমে সেই বাংলাদেশ গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।”