স্কুলে ফোন নিষিদ্ধের সুফল: শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ বাড়লো ৬৭ শতাংশ

স্কুলে ফোন নিষিদ্ধের সুফল: শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ বাড়লো ৬৭ শতাংশ

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকি অঙ্গরাজ্যের লুইভিলের ব্যালার্ড হাই স্কুলে ক্লাস শুরুর ঘণ্টা থেকে শেষ পর্যন্ত মোবাইল ফোন পুরোপুরি নিষিদ্ধ করার পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ চোখে পড়ার মতো বেড়েছে। এই সাহসী পদক্ষেপটি শুধু পড়াশোনার অভ্যাসে নয়, বরং শিক্ষার্থীদের সামাজিক জীবনেও এক বিশাল পরিবর্তন এনেছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত আগস্ট মাসে স্কুলের লাইব্রেরি থেকে শিক্ষার্থীরা ৮৯১টি বই নিয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৭ শতাংশ বেশি। এই পরিসংখ্যান প্রমাণ করে যে, ডিজিটাল নির্ভরতা কমলে শিক্ষার্থীরা দ্রুতই প্রথাগত বিনোদন ও সামাজিকতায় ফিরে আসে।

স্কুলের গ্রন্থাগারিক স্টেফানি কনরাড এই পরিবর্তনকে এক কথায় ‘অসাধারণ’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “আগে ফাঁকা সময় পেলেই বাচ্চারা ফোনে ডুবে যেত। একেবারে খোলসের ভেতর ঢুকে থাকত। এখন তারা বই পড়ছে, কথা বলছে, একে অপরের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছে—এটা সত্যিই আনন্দের।” শুধু লাইব্রেরি বা ক্লাসরুমে নয়, ফোন নিষিদ্ধ হওয়ার প্রভাব পড়েছে স্কুলের ক্যাফেটেরিয়াতেও। দুপুরের খাবারের সময় এখন শিক্ষার্থীরা মোবাইল স্ক্রলিং বাদ দিয়ে গল্প করছে, হাসছে, তাস খেলছে এবং বাইরে ছোটখাটো খেলাধুলাও করছে। এমনকি শুক্রবারে তাদের জন্য বিঙ্গো খেলার মতো আয়োজনও শুরু করা হয়েছে। স্কুলের প্রিন্সিপাল জেসন নয়িস এই নতুন পরিবেশে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, “আগে যেখানে সবাই চুপচাপ স্ক্রল করত, এখন সেখানে প্রাণবন্ত পরিবেশ। সংখ্যায় মাপা না গেলেও পরিবর্তনটা স্পষ্ট।”

দশম শ্রেণির ছাত্রী কালি ভিকার্স প্রথমে এই নীতিটি নিয়ে সন্দিহান ছিল এবং তার মতে, ফোন না থাকার কারণে কিছু শিক্ষার্থী অস্থির হয়ে ওঠে। তবে সে এখন স্বীকার করছে যে, বন্ধুদের সঙ্গে তার আলাপচারিতা এবং সামাজিক যোগাযোগ বেড়েছে। এই উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়ে মনোবিজ্ঞানী ও গবেষক জ্যাঁ টুয়েঞ্জি বলেন, স্কুলে ফোন নিষিদ্ধ থাকলে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে, সামাজিক দক্ষতা গড়ে তোলে এবং মানসিক স্বাস্থ্যেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। তবে কিছু অভিভাবক জরুরি পরিস্থিতিতে সন্তানের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে না পারার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। প্রিন্সিপাল নয়িস এই উদ্বেগের জবাবে বলেন, স্কুল কর্তৃপক্ষের কেন্দ্রীভূত যোগাযোগ ব্যবস্থাই বেশি নিরাপদ এবং যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তা যথেষ্ট।

লাইব্রেরিয়ান কনরাড মনে করেন, এই পরিবর্তন শুধু বই পড়ার অভ্যাস ফিরিয়ে আনেনি, বরং শিক্ষার্থীদের মধ্যে বই ভাগাভাগির আনন্দও তৈরি করেছে। তিনি তার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, “সম্প্রতি দুজন নবম শ্রেণির ছাত্র তাদের বই বদল করে পড়তে চাইল। এটা দেখে মনে হলো, তারা একে অপরকে বই পড়তে অনুপ্রাণিত করছে। যা একজন শিক্ষকের জন্য আনন্দের।” সামগ্রিকভাবে, ব্যালার্ড হাই স্কুলের এই পদক্ষেপ প্রমাণ করে যে, স্কুলে ফোন নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা এবং সামাজিক জীবনে ইতিবাচক ও দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তন আনতে সক্ষম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *