
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা ও অবৈধ সিম ব্যবহারের সমস্যা সমাধানে অন্তর্বর্তী সরকার তাদের বৈধভাবে সিম ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার কথা ভাবছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে মোবাইল ফোন অপারেটরদের সঙ্গে সরকারের আলোচনাও হয়েছে।
বর্তমানে ১২ লক্ষেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে বসবাস করছে। তাদের সিম ব্যবহারের অনুমতি না থাকলেও, ক্যাম্পগুলোতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের অবৈধ সিম ব্যবহার হচ্ছে। এতে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার রোহিঙ্গাদের একটি বৈধ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সিম দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
যেভাবে সিম দেওয়া হবে
বর্তমানে সিম কেনার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র এবং বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের প্রয়োজন হয়। যেহেতু রোহিঙ্গাদের এমন কোনো পরিচয়পত্র নেই, তাই বিকল্প পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা চলছে। আলোচনার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী:
- ভিন্ন নম্বর সিরিজ: মোবাইল অপারেটররা রোহিঙ্গাদের জন্য একটি ভিন্ন নম্বর সিরিজ বরাদ্দ রাখবে।
- পরিচয়পত্র: জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনের (UNHCR) দেওয়া ‘প্রোগ্রেস আইডি’ ব্যবহার করে ১৮ বছরের বেশি বয়সীরা সিম নিতে পারবেন।
- বণ্টন প্রক্রিয়া: ইউএনএইচসিআর সরাসরি এই সিমগুলো সংগ্রহ করে রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিতরণ করবে।
সরকারের লক্ষ্য, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের আগেই প্রাথমিকভাবে পাইলট প্রকল্প হিসেবে ১০ হাজার সিম বরাদ্দ দেওয়া। এই সিমগুলোর প্যাকেজ ও খরচ ইউএনএইচসিআর বা সরকার বহন করবে।
নতুন সিম দেওয়া শুরু হলে বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে যে সকল অবৈধ সিম বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে, সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে।
অপারেটরদের প্রতিক্রিয়া ও নিরাপত্তা ইস্যু
গ্রামীণফোনের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার তানভীর মোহাম্মদ সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে রবি আজিয়াটার চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেছেন, নিরাপত্তার কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে অপারেটরদের বড় অঙ্কের বিনিয়োগ অকার্যকর হয়ে পড়বে। বাংলালিংকের হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স তাইমুর রহমান নিবন্ধনের প্রক্রিয়া সহজ করার অনুরোধ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী বলেন, “রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দাদের শনাক্তকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি নিশ্চিত না হলে সিম দেওয়া যাবে না।”
পরিবেশকর্মী আবু নাজম মো. তানভীর হোসেন পরামর্শ দিয়েছেন, নতুন সিম দেওয়ার আগে ক্যাম্পগুলোতে মিয়ানমারের সক্রিয় নেটওয়ার্ক বন্ধ করা এবং অবৈধ সিমগুলো জব্দ করা উচিত।