কাতার সফরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গী হয়ে উচ্ছ্বসিত চার জন নারী খেলোয়াড়

কাতার সফরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গী হয়ে উচ্ছ্বসিত চার জন নারী খেলোয়াড়
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী চার নারী ক্রীড়াবিদ তাঁদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন।

কাতার সফরে গিয়ে সম্মান পেয়ে আনন্দিত চার নারী ক্রীড়াবিদ

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে কাতার সফরে অংশ নিয়ে দারুণ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন তাঁর সফরসঙ্গী চার নারী ক্রীড়াবিদ। তাঁদের ভাষায়, কাতারে যে পরিমাণ সম্মান ও মর্যাদা পেয়েছেন, তা ছিল এক অনন্য অভিজ্ঞতা। কোথায় গিয়েছেন, সেখানেই পেয়েছেন উষ্ণ অভ্যর্থনা ও সম্মান।

শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। সেখানে তাঁরা জানান, এই সফর তাঁদের জীবনের একটি গর্বের অধ্যায় হয়ে থাকবে।

জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক আফঈদা খন্দকার বলেন, “আমরা কতটা খুশি, তা কথায় বোঝানো কঠিন। কাতার আমাদের যে সম্মান দিয়েছে, তা সত্যিই অসাধারণ। শুনেছি, সাধারণত সবাইকে এমন সম্মান দেওয়া হয় না। তাই আমাদের জন্য এটা ছিল এক বিশাল পাওয়া।

বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড় শাহেদা আক্তার জানান, কাতার সফরের সময় তাঁরা কাতার ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং নিজেদের প্রয়োজনীয় চাহিদা ও সুযোগ-সুবিধা নিয়ে সরাসরি আলোচনা করেন।

তিনি বলেন, “খেলাধুলার সময় আমরা অনেক সময়ই ইনজুরির শিকার হই। কিন্তু দেশে আমাদের সেই অর্থে উন্নত চিকিৎসা বা সাপোর্টিং ফ্যাসিলিটিজ থাকে না।”

শাহেদা আরও জানান, তাঁদের কথা শুনে কাতার ফাউন্ডেশনের সিইও আশ্বাস দেন যে, নেইমার ও রোনালদোর মতো আন্তর্জাতিক তারকাদের ইনজুরির চিকিৎসায় যেভাবে কাজ করা হয়, ঠিক সেভাবেই বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রেও তাঁরা সহযোগিতা করবেন।

কাতার সফরে নারী ক্রীড়াবিদদের অভিজ্ঞতা: উন্নয়ন, সম্ভাবনা ও সম্মান

বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড় শাহেদা আক্তার জানান, দেশে নারী ফুটবলাদের জন্য মানসম্পন্ন মাঠের অভাব রয়েছে—এই বিষয়টিও তাঁরা কাতার ফাউন্ডেশনের কাছে তুলে ধরেছেন। শুধু ফুটবল নয়, অন্যান্য খেলাধুলা নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি। কাতার সফরকে তিনি দারুণ এক অভিজ্ঞতা হিসেবে বর্ণনা করেন।

তিনি আরও জানান, বিশ্বকাপ ২০২২-এর ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত কাতারের লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে যাওয়ার সুযোগ পান তাঁরা। সেই ম্যাচে অংশ নেওয়া দুই দলের ড্রেসিংরুম পরিদর্শন এবং কাতারের স্পোর্টস মিউজিয়াম ঘুরে দেখার অভিজ্ঞতাও তাঁদের ছিল আনন্দদায়ক।

প্রথমবারের মতো সরকারপ্রধানের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় সফরে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়ে ক্রিকেটার শারমিন সুলতানা বলেন, কাতার ফাউন্ডেশনের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে তাঁদের বৈঠক হয়েছে। স্টেডিয়াম ও ক্রীড়া একাডেমি ঘুরে দেখার পাশাপাশি বাংলাদেশের খেলাধুলার উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, “কীভাবে আমাদের ক্রীড়াক্ষেত্রকে আরও এগিয়ে নেওয়া যায়, তা নিয়ে ওদের কাছ থেকে অনেক কিছু জানার চেষ্টা করেছি।”

অন্যদিকে, ক্রিকেটার সুমাইয়া আক্তার জানান, ফুটবলপ্রধান দেশ কাতার ক্রিকেটে তেমনভাবে সম্পৃক্ত না হলেও, তাঁরা কাতারকে বাংলাদেশে ক্রিকেট পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। কাতারে ক্রিকেট কার্যক্রম শুরু করার সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, কাতারে এমন একটি ক্রীড়াঙ্গন পরিদর্শনের সুযোগ পেয়েছেন, যেখানে ফুটবল ছাড়াও সুইমিং, বাস্কেটবল ও টেবিল টেনিসের মতো খেলাধুলার সুযোগ রয়েছে। কীভাবে একটি ক্রীড়াক্ষেত্রকে বহুমুখীভাবে ব্যবহার করা যায়, তা তাঁর কাছে ছিল শেখার মতো অভিজ্ঞতা।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, কাতার ফাউন্ডেশনের আমন্ত্রণে চার নারী ক্রীড়াবিদকে কাতার সফরে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সফরে নারীদের জন্য স্টেডিয়াম, ডরমিটরি, জিমনেসিয়াম এবং ইনজুরি রিহ্যাব সুবিধা নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *