নেপাল-ইন্দোনেশিয়ার পর এবার ফিলিপাইনে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন

নেপাল-ইন্দোনেশিয়ার পর এবার ফিলিপাইনে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন

ইন্দোনেশিয়া ও নেপালের পর এবার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ফিলিপাইনেও দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের দুর্নীতির অভিযোগে দেশটিতে সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ চলছে।

নেপালে যেমন ‘জেন জি’দের নেতৃত্বে ‘নেপো কিড’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে বড় কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদদের সন্তানদের বিলাসবহুল জীবনের কঠোর সমালোচনা হয়েছিল, একই আদলে ফিলিপাইনেও প্রভাবশালী ও ক্ষমতাসীনদের সন্তানদের বিলাসবহুল জীবন যাপনের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা চলছে। টিকটক, ফেসবুক ও এক্স হ্যান্ডেলে ‘নেপো বেবি’ হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে তাদের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করা হচ্ছে। এই ক্ষোভ শুধু অনলাইনে সীমাবদ্ধ নেই, অফলাইনেও তা ছড়িয়ে পড়েছে।

সামাজিক মাধ্যমে অভিযোগ উঠেছে যে, সরকার বন্যা নিয়ন্ত্রণে বিলিয়ন বিলিয়ন পেসো ব্যয় করলেও তার কোনো ফল দেখা যাচ্ছে না। এর কারণ হিসেবে ‘ভূতুড়ে’ প্রকল্পগুলোর চুক্তিকে দায়ী করা হচ্ছে, যেগুলো বাস্তবে কখনোই নির্মিত হয় না। এমন পরিস্থিতিতে গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলীদের প্রকাশ্যে অপমান ও অপদস্থ করার অভিযোগও উঠেছে। বিক্ষুব্ধ জনগণ আগামী রোববার ব্যাপক প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে।

‘ক্রিয়েটরস এগেইনস্ট করাপশন’ নামের একটি গ্রুপ জানিয়েছে, তারা থামবে না এবং ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত সোচ্চার থাকবে।

ফিলিপাইনের এক স্কুল শিক্ষিকা, ক্রিসা তলেন্তিনো, বিবিসির কাছে তার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তিনি কঠোর পরিশ্রম করে কর দেন, অথচ তার সেই করের টাকা দুর্নীতিবাজ রাজনীতিকরা ভোগ করছেন। তার এই অভিযোগ এখন পুরো ফিলিপাইনে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ রোমুয়াল্ডেজ মার্কোস জুনিয়র, যিনি বংবং মার্কোস নামেও পরিচিত, তিনিও এই সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন। একটি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ পরিদর্শনে গিয়ে তিনি দেখেন, সেটি নির্মিতই হয়নি। দেশটির অর্থনৈতিক পরিকল্পনা মন্ত্রীও জানিয়েছেন যে, বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের ৭০ শতাংশ অর্থ দুর্নীতির কারণে আত্মসাৎ হয়।

এই ঘটনার জেরে দেশটির পার্লামেন্টের স্পিকার পদত্যাগ করেন এবং সেনেটের নেতাকে পদচ্যুত করা হয়। প্রেসিডেন্ট মার্কোস জুনিয়র একটি তদন্ত শুরু করার ঘোষণা দিয়ে বলেন, “আমি যদি প্রেসিডেন্ট না হতাম, তাহলে হয়তো আমিও তাদের (আন্দোলনকারীদের) সঙ্গে রাস্তায় থাকতাম।”

উল্লেখ্য, ফিলিপাইনের বর্তমান প্রেসিডেন্টের বাবার ক্ষমতাও ১৯৮৬ সালে একটি দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের মুখেই পতন হয়েছিল। সেই সময়ের প্রেসিডেন্ট মার্কোস সিনিয়রের বিরুদ্ধেও বিলিয়ন বিলিয়ন পেসো আত্মসাতের অভিযোগ ছিল। এবার আগামী রোববার যে দুর্নীতিবিরোধী বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়েছে, সেই দিনটিও ২১ সেপ্টেম্বর, যে দিনটিতে ১৯৭২ সালে মার্কোস সিনিয়র দেশে সামরিক আইন জারি করেছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *