
সংসদ ভবনে ক্যাবিনেট কক্ষকে নতুন করে সাজিয়ে সংসদের উচ্চ কক্ষ তৈরি করার প্রাথমিক পরিকল্পনা করা হয়েছে। বিকল্প হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বা শপথ কক্ষকেও উচ্চকক্ষ হিসেবে প্রস্তুত করা হতে পারে। অন্যদিকে, বর্তমানে বিদ্যমান অধিবেশন কক্ষটি নিম্নকক্ষ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। সুপারিশ অনুযায়ী, নিম্নকক্ষের সদস্য সংখ্যা হবে ৪০০ জন, যেখানে বর্তমানে ৩৫৪টি আসন রয়েছে। সেক্ষেত্রে, অধিবেশন কক্ষে থাকা কূটনীতিক ও বিদেশি অতিথিদের জন্য বরাদ্দ থাকা দুটি লাউঞ্জও নিম্নকক্ষে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে সংসদ ভবনের ভিতরের কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে, বলে জানিয়েছেন সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্টরা। তবে, সবকিছু চূড়ান্তভাবে নির্ধারিত হবে কোন ধরনের সংসদ গঠন করা হবে তার সিদ্ধান্তের পর। বিষয়টি সরকারের উচ্চপর্যায়ে জানানো হয়েছে।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনে নতুন ধারার সংসদ গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। চার বছর মেয়াদী ৫০৫ জন সদস্যের সংসদ হবে, যা উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষের সমন্বয়ে গঠিত হবে। নিম্নকক্ষে ৪০০ আসন থাকবে, যার মধ্যে ৩০০ জন সদস্য একক আঞ্চলিক নির্বাচনি এলাকা থেকে সরাসরি নির্বাচিত হবেন। এছাড়া, ১০০ জন নারী সদস্য সারা দেশের নির্ধারিত ১০০টি নির্বাচনি এলাকা থেকে নারী প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সরাসরি নির্বাচিত হবেন। অন্যদিকে, উচ্চকক্ষ (সিনেট) ১০৫ জন সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত হবে, এবং রাজনৈতিক দলগুলো সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির ভিত্তিতে উচ্চকক্ষে নির্বাচনের জন্য ১০০ জন প্রার্থী মনোনীত করবে।
অবশিষ্ট ৫টি আসন পূরণের জন্য রাষ্ট্রপতি নাগরিকদের মধ্য থেকে (যারা কোনো কক্ষেরই সদস্য নন) মনোনীত করবেন। নিম্নকক্ষের মতো উচ্চ কক্ষেও স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার থাকবে।
এ প্রসঙ্গে সংসদ সচিবালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, “সংবিধান সংস্কার ও নির্বাচন সংস্কার কমিশন আগামীর সংসদ পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে। সেখানে উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ রাখার কথা বলা হয়েছে। আবার দেশের বড় রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ আরও কয়েকটি দল ও সংগঠন একই কাঠামোর সংসদের সুপারিশ করেছে। তাই বিষয়টিকে অগ্রাধিকার হিসেবে নেওয়া হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সংসদ সচিবালয় সংসদের নতুন অবকাঠামোগত বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিকভাবে পরিকল্পনা করেছে।”
৮ ফেব্রুয়ারি সংবিধান সংস্কার কমিশনসহ ৬ সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ইলিয়ন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজকে প্রধান করে সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠিত হয়। এর আগে কমিশন তাদের সুপারিশের সার-সংক্ষেপ প্রকাশ করে।
নতুন ধারার সংসদ গঠন প্রসঙ্গে সংস্কার কমিশন জানিয়েছে, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে একটি এক কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা ব্যবস্থা বিরাজ করছে। তবে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এর কার্যকারিতা ক্রমশ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। নির্বাহী কার্যাবলি তদারকির অকার্যকারিতা, দুর্বল প্রতিনিধিত্ব এবং বিভিন্ন কাঠামোগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতার কারণে আইনসভা তার যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারেনি। নির্বাহী বিভাগের আধিপত্যের ফলে অর্থপূর্ণ সংসদীয় আলোচনা এবং সংসদের যাচাইবাছাই কার্যক্রম উল্লেখযোগ্যভাবে সীমিত হয়েছে। এছাড়া, বিরোধী দলগুলোর ক্রমাগত সংসদ বর্জনের সংস্কৃতির কারণে জবাবদিহির ক্ষেত্রটি অনেকটাই সংকুচিত হয়ে পড়েছে।