
সাম্প্রতিক সময়ে টেলিগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে লোভনীয় চাকরির প্রলোভনে ভুক্তভোগীদের প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে। প্রাথমিকভাবে অজ্ঞাত নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে চাকরির বিজ্ঞাপন পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, অল্প সময় ও কম পরিশ্রমে বাড়ি বসেই বড় অর্থ উপার্জন করা যাবে।
প্রলোভনে পড়া ভুক্তভোগীরা পরে হোয়াটসঅ্যাপের লিংক মারফত টেলিগ্রামের “Task” বা কাজের নির্দেশনা পায়। কয়েকটি কাজ সম্পন্ন করার পর মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে বেতন দেওয়া হয়। এরপর চক্রটি ভুক্তভোগীর বিশ্বাস অর্জন করে।
বিশ্বাসযোগ্যতার সুযোগে চক্রটি ভুক্তভোগীদেরকে বিভিন্ন টাস্কে বিনিয়োগ করতে বাধ্য করে। একবার টাকা দেওয়ার পর ভুক্তভোগীকে নানা অজুহাতে অর্থ প্রদান করতে বাধ্য করা হয়। এরপর এসব টাকা ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে বিদেশে হুন্ডি করা হয়।
সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) সম্প্রতি এ ধরনের প্রতারণার এক সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি হলেন নয়ন আলী (৩৪), চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার চামাগ্রামের বাসিন্দা। ডিএমপির ধানমন্ডি এলাকায় ১৩ আগস্ট অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয় এবং তার কাছ থেকে ১টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নয়ন আলী স্বীকার করেছেন, তিনি চক্রের সঙ্গে যুক্ত এবং দুটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে একটি ভুক্তভোগীর কাছ থেকে প্রায় ২৭ লাখ টাকা হাতিয়েছেন। এছাড়াও তিনি স্বীকার করেছেন, অন্যান্য ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে চক্রটি মোট প্রায় ৪ কোটি টাকা হাতিয়েছে।
নয়ন আলী জানিয়েছেন, চক্রটির মূল হোতা হলেন মেহেদী হাসান (৩০) এবং নয়ন আলীর পরিচিত জুহুরুল ইসলাম (৪০) এই চক্রে তার মধ্যস্থতা করতেন। নয়ন আলী তার নিজের এবং বোন মাসরুফার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে প্রতারণার কাজ করতেন। প্রতি ১ লাখ টাকা লেনদেনে তিনি ১ হাজার টাকা কমিশন পেতেন।
সিআইডি জানিয়েছে, গ্রেফতারকৃত নয়ন আলীর ব্যাংক হিসাব পর্যালোচনার মাধ্যমে দেখা গেছে, গত তিন মাসে প্রায় ৪ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। এই অর্থ ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে বিদেশে হুন্ডি করা হতো।
নয়ন আলীর বিরুদ্ধে ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা নং-১১/২৬/০৩/২০২৫ এবং ধানমন্ডি থানায় মামলা নং-১৭(০৪)/২০২৫, উভয়ই পেনাল কোড ৪০৬/৪২০ ধারা অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও চট্টগ্রামে তার বিরুদ্ধে একই অভিযোগে আরেকটি মামলা রয়েছে।
সিপিসি চক্রের অন্যান্য সদস্য, বিশেষত নয়ন আলীর চাচা জুহুরুল ইসলাম ও মূল হোতা মেহেদী হাসানকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষকে অনুরোধ করা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে কোনো বিনিয়োগের প্রস্তাব নিয়ে সতর্ক থাকতে এবং সন্দেহজনক কার্যকলাপ কর্তৃপক্ষকে জানাতে।