
গ্রেপ্তার ও আটকজনিত হয়রানি কমাতে এবং পুলিশি জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সরকার নতুন করে ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। আজ আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, “ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন অধ্যাদেশ, ২০২৫” উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদন করেছে।
একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া স্ট্যাটাসে ড. আসিফ নজরুল জানান, এই অধ্যাদেশ বাস্তবায়ন হলে বিচার প্রক্রিয়া গতিশীল হবে এবং গ্রেপ্তার-আটকের সময় নাগরিকদের অধিকতর আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত হবে।
প্রস্তাবিত আইনের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো নিম্নরূপ:
- পরিচয় প্রকাশ বাধ্যতামূলক: পুলিশ সদস্যদের গ্রেপ্তার করার সময় নিজের পরিচয় প্রকাশ করতে হবে এবং ‘মেমোরেন্ডাম অব অ্যারেস্ট’ পূরণ করতে হবে।
- সুরক্ষা নিশ্চিতে চেকলিস্ট: গ্রেপ্তারকৃতের আইনি অধিকার নিশ্চিত হয়েছে কি না, তা যাচাইয়ে চেকলিস্ট পূরণ করতে হবে এবং এটি ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে উপস্থাপন করতে হবে।
- ৫৪ ধারায় পরিবর্তন: এখন থেকে পুলিশ সরাসরি কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারবে না, অপরাধ পুলিশ সদস্যের সামনে ঘটতে হবে অথবা যথেষ্ট প্রমাণ থাকতে হবে।
- গ্রেপ্তারের তথ্য পরিবারকে জানানো: গ্রেপ্তারকৃতের পরিবারের সদস্যদের ১২ ঘণ্টার মধ্যে অবহিত করতে হবে এবং আইনজীবীর সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দিতে হবে।
- স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিধান: গ্রেপ্তার বা রিমান্ডের পর যদি কোনো আসামি আহত হন, তবে তাকে চিকিৎসা দিতে হবে এবং আঘাতের কারণ নির্ধারণে চিকিৎসকের রিপোর্ট বাধ্যতামূলক।
- থানায় তথ্য অন্তর্ভুক্তি: যে কোনো সংস্থা গ্রেপ্তার করুক, তা সংশ্লিষ্ট থানায় জিডিভুক্ত করতে হবে এবং গ্রেপ্তারের তালিকা থানায় ও জেলা/মেট্রো হেডকোয়ার্টারে প্রদর্শন করতে হবে।
- সাক্ষী ও ভিকটিমের সুরক্ষা: আদালত প্রয়োজন মনে করলে সাক্ষী বা ভিকটিমের সুরক্ষার জন্য বিশেষ আদেশ দিতে পারবে এবং সাক্ষীর খরচ বহনের সুযোগ থাকবে।
- রিমান্ডের সময়সীমা নির্ধারণ: একই মামলায় রিমান্ডের মেয়াদ ১৫ দিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।
- মিথ্যা মামলায় কঠোর শাস্তি: মিথ্যা মামলা প্রমাণিত হলে বাধ্যতামূলক শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে এবং জরিমানা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ১ লক্ষ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত এই আইন কার্যকর হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ হবে এবং সাধারণ মানুষ ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে আরও বেশি আস্থা পাবে।