গণমাধ্যমে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতিবেদন’: এনসিপি’র তীব্র নিন্দা

জাতীয় নাগরিক পার্টি – এনসিপি গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছে যে, সম্প্রতি দৈনিক মানবজমিন, দৈনিক কালবেলা, দৈনিক কালের কণ্ঠ এবং এনটিভি সহ কয়েকটি গণমাধ্যম তাদের আহ্বায়ক জনাব মোঃ নাহিদ ইসলামকে জড়িয়ে “সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত” এবং “বিভ্রান্তিকর” প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এনসিপি এই ধরনের “ক্লিকবেইট ও শিকারি সাংবাদিকতার” তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।

প্রতিবেদনের ভুল তথ্য ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ

এনসিপি’র প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দৈনিক মানবজমিনের প্রতিবেদনে (৮ পৃষ্ঠা, কলাম ১) জনাব আতিক মোর্শেদকে জনাব মোঃ নাহিদ ইসলামের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা সঠিক নয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আতিক মোর্শেদ একসময় নাহিদ ইসলামের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ছিলেন যখন তিনি উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু বর্তমানে তিনি মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী জনাব ফাইজ তাইয়্যেব আহমেদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসাবে কর্মরত আছেন।

এছাড়াও, এনসিপি আহ্বায়ক গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করেছেন যে, উপদেষ্টা হিসাবে কর্মরত থাকাকালীন ‘নগদ’ বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে ছিল। তাই ‘নগদ’ সংক্রান্ত বিষয়ে তাকে জড়িয়ে এমন প্রতিবেদনকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রতীয়মান হয়েছে। এনসিপি আরও উদ্বেগের সাথে উল্লেখ করেছে যে, একটি গোয়েন্দা সংস্থা থেকে প্রাপ্ত ‘রেডিমেইড’ প্রতিবেদনকে তথাকথিত ‘অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা’ হিসাবে জনসম্মুখে উপস্থাপনের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে উঠেছে। তারা এটিকে ‘ওয়ান-ইলেভেন সরকারের’ আমলে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়ে ফরমায়েশি সংবাদ প্রকাশের পুনরাবৃত্তি বলে মনে করছে, যা “ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার প্রতিধ্বনি” এবং “আরেকটি এক-এগারোর প্রেক্ষাপট তৈরি করছে” বলে এনসিপি দাবি করেছে।

রাজনৈতিক দলের প্রতিক্রিয়া ও গণমাধ্যমের সমালোচনা

এই প্রতিবেদন প্রকাশের পরপরই কোনো রকম যাচাই-বাছাই ছাড়াই একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের মিডিয়া সেল থেকেও এনসিপি এবং মোঃ নাহিদ ইসলামকে টার্গেট করে ‘ফটোকার্ড’ প্রকাশ করা হয়েছে, যা এনসিপি’র কাছে “গভীর উদ্বেগের ও শঙ্কাজনক”। এনসিপি একটি গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে এমন রাজনৈতিক সংস্কৃতি নির্মাণের কথা বলছে, যেখানে পারস্পরিক সমালোচনা হবে গঠনমূলক, যুক্তিনির্ভর ও বস্তুনিষ্ঠ। তারা মনে করে, ভিত্তিহীন প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার প্রবণতা পারস্পরিক সম্মান ও আস্থা নষ্ট করে রাজনৈতিক অঙ্গনের পরিবেশ আবারও পূর্বের ন্যায় দ্বন্দ্বমুখর ও আক্রোশমূলক করে তুলতে পারে, যা সকল পক্ষেরই পরিহার করা উচিত।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ছাত্র-জনতার প্রতিবাদের মুখে দৈনিক মানবজমিন তাদের অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সংশোধনী আনলেও, গতকালই দৈনিক কালবেলা, দৈনিক কালেরকণ্ঠ, ও এনটিভি একটি রাজনৈতিক দলের নেতার ফেসবুক পোস্টকে উপজীব্য করে এনসিপি’র আহ্বায়ককে জড়িয়ে চটকদার ও বিভ্রান্তিকর শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

গণমাধ্যম সংস্কার ও ভবিষ্যৎ অঙ্গীকার

এনসিপি উল্লেখিত গণমাধ্যমগুলোর কাছে অবিলম্বে বিভ্রান্তিকর তথ্যের সংশোধন এবং ভুল স্বীকার করে পেশাদার সাংবাদিকতার ন্যূনতম দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছে।

তারা হতাশার সাথে লক্ষ করছে যে, একটি গণঅভ্যুত্থানের পরও বাংলাদেশের গণমাধ্যমগুলো থেকে প্রত্যাশিত ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না। রাষ্ট্রের বিভিন্ন সেক্টরের মতোই গণমাধ্যমেও “পতিত ফ্যাসিবাদের তল্পিবাহকদের” দেখা যাচ্ছে। এমনকি, অভ্যুত্থান ও শেখ হাসিনা কর্তৃক পরিচালিত গণহত্যাকেই নানা মহল বিতর্কিত ও প্রশ্নসাপেক্ষ করার চেষ্টা করছে। গণমাধ্যমে পুরোনো কায়দায় রাজনৈতিক দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর থেকেই কিছু রাজনৈতিক পক্ষকে গণমাধ্যমের মালিকানা ও গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো দখলে তৎপর হতে দেখা গেছে, যার সাথে বিভিন্ন অলিগার্ক মাফিয়া মিডিয়া মালিকদের সংশ্লিষ্টতাও স্পষ্ট। এনসিপি মনে করে, এটি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতাকে সংকুচিত করে।

এই দুরবস্থা নিরসনে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সংস্কার প্রতিবেদন অনতিবিলম্বে বাস্তবায়ন করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছে এনসিপি। পাশাপাশি, গণমাধ্যমের ওপর “নগ্ন হস্তক্ষেপ” এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো “দলীয়করণের মাধ্যমে যারা এক-এগারোর পুনরাবৃত্তির চেষ্টা করছেন”, চব্বিশের অভ্যুত্থানে প্রতিফলিত গণসার্বভৌমত্বের অনুপ্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়ে জনগণকে সাথে নিয়ে তাদেরকে মোকাবেলা করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে এনসিপি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *