বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক: এনসিপি একাত্তরের ইস্যু সমাধানের আহ্বান জানালো

বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক: এনসিপি একাত্তরের ইস্যু সমাধানের আহ্বান জানালো

ঢাকায় পাকিস্তানের হাইকমিশনে শনিবার (২৩ আগস্ট) অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করতে একাত্তরের ইস্যু সমাধানের গুরুত্ব তুলে ধরেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বৈঠকে অংশ নেন পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। এনসিপির পক্ষ থেকে সাত সদস্যের প্রতিনিধি দল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের অতীত সম্পর্ক অনেক জটিল এবং দ্বন্দ্বপূর্ণ হলেও, ভবিষ্যতে সম্পর্ক উন্নয়নের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের ধারণা এবং অনুভূতিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত ইস্যুতে সমাধান দ্রুত হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

আখতার হোসেন আরও বলেন, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও অর্থনীতি খাতে দুই দেশের সহযোগিতা বাড়ানোর ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। একই সঙ্গে, কোনো দেশ যেন অন্যটির ওপর আধিপত্য বিস্তার বা বড় ভাই সুলভ আচরণ করতে না পারে, সেটিও আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। তিনি উল্লেখ করেন, “দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভ্রাতৃত্বপূর্ণ হওয়া উচিত। সেখানে কোনো ধরনের আগ্রাসন বা আধিপত্যবাদী মনোভাব থাকা যাবে না।”

এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরউদ্দীন পাটওয়ারী জানান, বৈঠকে নদী ও পানি সংক্রান্ত বিষয়ও গুরুত্বসহকারে আলোচিত হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে নদী ও পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কীভাবে উন্নত করা যায়, সেই বিষয়ে অভিজ্ঞতার বিনিময় করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, “পাকিস্তান গত ১৫-২০ বছরে ওষুধ শিল্পে অনেক প্রচেষ্টা চালিয়েছে। তাদের কাঁচামাল এবং উৎপাদন ব্যবস্থার সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের ওষুধ খাতের খরচ কমিয়ে রপ্তানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। এখন পর্যন্ত এই সহযোগিতার সুযোগ যথাযথভাবে কাজে লাগানো হয়নি।”

বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম, প্রতিরক্ষা খাতের উন্নয়ন এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় প্রসঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। পাটওয়ারী জানান, “সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনের সম্ভাবনা, শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্রের সহযোগিতা, এবং প্রতিরক্ষা খাতের উন্নয়নের বিষয়গুলোও আলোচনার অন্তর্ভুক্ত ছিল। এছাড়া একাত্তরের পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে বিস্তারিত কথাও হয়েছে।”

সার্ক (দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোর সংস্থা) সম্পর্কেও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। পাটওয়ারী বলেন, “ভারতের কারণে সার্ক কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। আমরা আলোচনা করেছি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে কীভাবে সার্ককে পুনরায় সক্রিয় করে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়নের পথ সুগম করা যায়। পাকিস্তানও একটি পরমাণু শক্তিধর দেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে। সার্ককে কার্যকর করার ক্ষেত্রে পাকিস্তানের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।”

একাত্তরের বিরোধ সমাধানের বিষয়ে ইসহাক দারের অবস্থান সম্পর্কে পাটওয়ারী বলেন, “আমরা তাদের জানিয়েছি যে, একাত্তরের ইস্যু দ্রুত সমাধান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তান এ বিষয়ে প্রস্তুত এবং ইতিবাচক মনোভাব প্রদর্শন করেছে।”

বৈঠকের মূল লক্ষ্য ছিল দুই দেশের মধ্যে অতীতের দ্বন্দ্ব কাটিয়ে সম্পর্কের নতুন দিক তৈরি করা। শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা, ওষুধ শিল্প এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা—এসব ক্ষেত্রকে গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *