
বাংলাদেশে গত ২৪ বছরে ৩২৪ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে সৌদি আরব। দেশটির ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন খাতে আরও বড় পরিসরে বিনিয়োগে আগ্রহী হলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলোর অসহযোগিতায় তারা নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। এর ফলে প্রতিশ্রুত বিনিয়োগ ঝুঁকিতে পড়ছে, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে প্রত্যাহারের শঙ্কাও তৈরি হচ্ছে।
৩ প্রকল্পে সৌদি বিনিয়োগকারীদের তিক্ত অভিজ্ঞতা
সম্প্রতি বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (বিডা) লেখা এক চিঠিতে সৌদি আরবভিত্তিক বিনিয়োগ কোম্পানি ইঞ্জিনিয়ারিং ডাইমেনশন ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট তাদের তিনটি তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছে।
১. এস জেমকো: ২০২১ সালে বাংলাদেশ জেনারেল ইলেকট্রিক ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে ১০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের লক্ষ্য নিয়ে ‘এস জেমকো’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে সৌদি কোম্পানিটি। প্রথম ধাপে ৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে কারখানা স্থাপন করা হলেও সরকারি নীতি পরিবর্তনের কারণে হঠাৎ করে উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেই থেকে কারখানাটি অচল অবস্থায় আছে।
২. ক্লিংকার উৎপাদন: ২০১৮ সালে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) সঙ্গে যৌথভাবে ‘এসবিআইসিসিএল’ নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করে। দেশে ক্লিংকার উৎপাদনের জন্য ৬০৩ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের চুক্তি হলেও, বিসিআইসি প্রতিশ্রুত ভূমি হস্তান্তরে জটিলতা সৃষ্টি করে। ফলে প্রায় সাড়ে ৫ মিলিয়ন ডলার খরচ করার পরও প্রকল্পটি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
৩. এলএনজি সরবরাহ: দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারত থেকে পাইপলাইনে বাংলাদেশে এলএনজি সরবরাহের জন্য ৮৪ মিলিয়ন ডলারের একটি প্রকল্প প্রস্তাব দিয়েছিল কোম্পানিটি। সরকারের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হলেও বিগত সরকারের অবহেলা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় এই প্রকল্পটি স্থগিত হয়ে যায়। এতে কোম্পানিটির ৩ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতাই বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় বাধা। সৌদি কোম্পানির মতো বড় বিনিয়োগকারীর এমন অভিজ্ঞতা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। এটি নিরসন করা না গেলে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের কোনো উদ্যোগই সফল হবে না।
ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবং সম্পর্ক ধরে রাখতে সৌদি কোম্পানিটি এবার ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জেট ফুয়েল পাইপলাইন ও জ্বালানি মজুদাগার নির্মাণের নতুন প্রস্তাব দিয়েছে। এই প্রস্তাবটি সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করতে আগ্রহী তারা। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে।
বিডার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সৌদি কোম্পানির সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেবেন।