
দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার নৈতিক অবক্ষয় ও মানের সংকট নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর এ এস এম আমানুল্লাহ। শনিবার (৯ আগস্ট) সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ৩৬৫ দিন’ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, দেশের অনেক কলেজে পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা হলে বসেই মোবাইল খুলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে উত্তর লিখছে, অথচ প্রিন্সিপালরা সেদিন অফিসে বসে চা খাচ্ছেন। এমনকি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে পরিদর্শনে যাওয়া কর্মকর্তারাও প্রিন্সিপালের কক্ষে বসে থাকেন।
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ফিজিক্সের শিক্ষক ফিলোসফির ইনকোর্স পরীক্ষার মার্কস দিচ্ছেন, অথচ প্রিন্সিপাল তা জানেন। দেশের বহু অনার্স ও মাস্টার্স কলেজে ল্যাব নেই, আর যেখানে আছে, সেখানেও ল্যাবের কার্যক্রম হয় না। তবুও শিক্ষার্থীদের পূর্ণ মার্কস দেওয়া হচ্ছে। ফলে ল্যাব ছাড়াই শিক্ষার্থীরা পাস করে যাচ্ছে।
প্রফেসর আমানুল্লাহ বলেন, ৫০০টি উপজেলায় পরীক্ষা ও ল্যাব সঠিকভাবে নেওয়ার মতো চারজন শিক্ষকও পাওয়া কঠিন। যোগ্য শিক্ষক পাওয়া যেন ‘ফেরেশতা খোঁজার মতো’। গভর্নিং বডির প্রসঙ্গে তিনি জানান, নব্বই বছর বয়সী প্রভাবশালী ব্যবসায়ীও প্রেস্টিজের কারণে ম্যানেজমেন্টে থাকতে চান, যা সুশাসন ফিরিয়ে আনার পথে বড় বাধা। বেসরকারি কলেজের গভর্নিং বডিতে বছরে লাখ লাখ টাকা খরচ হয় বিভিন্ন আয়োজন ও ভ্রমণে।
তিনি আরও জানান, এমপিওভুক্ত কলেজে শিক্ষকদের বছরে ২০০ কোটি টাকা এবং কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষকদের ১০০ কোটি টাকা বেতন দেওয়া হলেও, ১০ লাখ গ্রাজুয়েটের মধ্যে ৪ লাখের বেশি চাকরি পাচ্ছে না। যে শিক্ষা চাকরি দিতে ব্যর্থ, তা কেন অব্যাহত থাকবে—এ প্রশ্নও তোলেন তিনি।
উচ্চশিক্ষার পাঠক্রমকে যুগোপযোগী করার তাগিদ দিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বলেন, আমাদের কারিকুলাম প্রথম শিল্পবিপ্লবের মানেই আটকে আছে, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রস্তুতি নেই। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০ লাখ পরীক্ষার্থী থাকলেও প্রকৃত শিক্ষার্থীর সংখ্যা নগণ্য, আর এখানে দেশের ৭০% উচ্চশিক্ষা দেওয়া হয়।
সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, মধ্যপ্রাচ্যে অদক্ষ কর্মীর চাহিদা কমে যাচ্ছে। তাই এই সেমিস্টার থেকে ডিগ্রি পর্যায়ে আইসিটি ও ইংরেজি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তিনি অটোপাসের বিরোধিতা করে বলেন, “নো অটো পাস।”