ডেক্সরিপোর্ট, দেশি বার্তা।

সরকারের কাছে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া সংক্রান্ত সুপারিশ পেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। আগামীকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে এই সুপারিশ হস্তান্তর করা হবে। আজ সোমবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে কমিশনের শেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান, বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা কমিশন গঠনের শুরু থেকে চূড়ান্ত সুপারিশ জমা পর্যন্ত সব নথি, আলোচনার ভিডিও, অডিও ও ছবি সংরক্ষণের ওপর গুরুত্ব দেন।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, “এই নথি ও উপকরণগুলো জাতির জন্য অমূল্য সম্পদ। কোন পরিস্থিতিতে, কী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা জাতীয় সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি, সেটি ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণ করা জরুরি। প্রতিটি বৈঠকের ছবি, ভিডিও, চিঠিপত্রসহ সব দলিল সুশৃঙ্খলভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। টেলিভিশনে প্রচারিত আলোচনাগুলোকেও খণ্ড আকারে সংরক্ষণ করা উচিত, কারণ এগুলোই ভবিষ্যতের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ দলিল হয়ে থাকবে। গবেষক ও আগ্রহীরা যেন এসব তথ্য থেকে উপকৃত হতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করা দরকার।”
তিনি আরও বলেন, “এই দলিলগুলো প্রজন্মের পর প্রজন্ম টিকে থাকবে এবং ভবিষ্যতের রাজনৈতিক আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”
সমাপনী বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস রাজনৈতিক দল, ঐকমত্য কমিশনের কর্মকর্তা–কর্মচারী, গবেষক ও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বৈঠকে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের চূড়ান্ত রূপরেখা নির্ধারণের পাশাপাশি অন্যান্য সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান সদস্যরা।
কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বাংলাদেশের একটি জবাবদিহিমূলক ও স্থায়ী রাষ্ট্র কাঠামো গঠনের লক্ষ্যে কাজ করেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি আইনবিদ, বিচারপতি, শিক্ষাবিদ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেই জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ চূড়ান্ত করা হয়েছে।”
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “২৪ সালের জুলাইয়ের গণ–অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের তিনটি প্রধান দায়িত্বের একটি ছিল কাঠামোগত সংস্কার। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সেই সংস্কারের রূপরেখা তৈরির দায়িত্বে ছিল। মতভেদ থাকলেও রাজনৈতিক দলগুলো সবসময় সহযোগিতা করেছে এবং ধৈর্য ও প্রজ্ঞার সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিয়েছে।”
অধ্যাপক আলী রীয়াজ আরও বলেন, “জুলাইয়ের ছাত্র–শ্রমিক–জনতার আন্দোলন আমাদের যে পরিবর্তনের সুযোগ এনে দিয়েছে, তা হারানো যাবে না। কমিশন সংস্কারকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে যাতে জনগণ কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন দেখতে পারে। কমিশনের আনুষ্ঠানিক মেয়াদ ৩১ অক্টোবর শেষ হবে, তবে প্রয়োজন হলে আমরা নাগরিক হিসেবে সহযোগিতা চালিয়ে যাব।”
নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সরকারের দৃঢ়তা ও সাহসিকতা প্রয়োজন। গণ–অভ্যুত্থানে যেসব প্রাণ ঝরে গেছে, তাদের ত্যাগের মর্যাদা রক্ষায় প্রয়োজনীয় সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে।”
বিচারপতি এমদাদুল হক মন্তব্য করেন, “গণ–অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যের যে উদাহরণ দেখা গিয়েছিল, কমিশনের বৈঠকগুলোতেও সেই আন্তরিকতা ও সহমর্মিতা পরিলক্ষিত হয়েছে।”
পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন বলেন, “প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দলগুলো ধৈর্যের সঙ্গে একত্রে আলোচনা করেছে—এই ঐক্য ভবিষ্যতেও বজায় থাকুক, এটাই আমাদের কামনা।”
দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান সরকারকে জুলাই সনদের পাশাপাশি দুদক সংস্কারেও দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার বলেন, “যেসব শহীদ পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে, তারা সবাই বলেছেন—সংস্কার বাস্তবায়িত না হলে তাদের প্রিয়জনদের ত্যাগ বৃথা যাবে। যারা জুলাইয়ে প্রাণ দিয়েছেন, তারাই এই পরিবর্তনের মূল প্রেরণা।”
আগামীকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের প্রস্তাব ও সুপারিশ হস্তান্তর করবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।