২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, অর্থ উপদেষ্টার উপস্থাপিত ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেটটি প্রত্যাশিতভাবে নতুন কোনো দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করতে পারেনি।
তিনি মন্তব্য করেন, “জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানের পর এটি প্রথম বাজেট হলেও এতে নতুন বাংলাদেশ গঠনের প্রতিশ্রুতি দৃশ্যমান নয়। এটি মূলত পূর্ববর্তী বাজেটগুলোর ধারাবাহিকতায় একটি গতানুগতিক প্রস্তাব।”
তিনি আরও জানান, এবারের বাজেটে বড় কোনো ব্যয় হ্রাস বা নতুন সংযোজন নেই। বরং রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা আদায়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যা গতবারও পূরণ সম্ভব হয়নি।
মাওলানা মা’ছুম বলেন, রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা, আর বাজেট ঘাটতি নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকা, যার বড় অংশই বিদেশি ঋণের ওপর নির্ভরশীল। এতে বাজেটে বিদেশ নির্ভরতা কমার কোনো লক্ষণ পাওয়া যাচ্ছে না।
তিনি আরো জানান, বাজেটে পরোক্ষ কর বৃদ্ধির মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের উদ্যোগ দেখা গেলেও প্রত্যক্ষ করের ক্ষেত্রে তেমন কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে সাধারণ মানুষের উপর করের বোঝা বাড়বে। ভ্যাট ও আমদানি শুল্ক খাতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে, যার প্রভাব বাজারে পড়বে।
জামায়াত নেতা বলেন, স্থানীয় শিল্পের উপর কর ও ভ্যাট অব্যাহতির সুযোগ সংকুচিত করা হয়েছে, যা উৎপাদন ব্যয় বাড়াবে। এসি, ফ্রিজ, মোবাইল ও এলইডি পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাবে, পাশাপাশি সুতার আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির ফলে পোশাক শিল্পের ব্যয় বাড়বে এবং এতে রপ্তানি খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
তিনি আরও বলেন, বাজেটে শিক্ষা সামগ্রীর দাম কমালেও শিক্ষা খাতে মোট বাজেট বরাদ্দ হ্রাস করা হয়েছে, যা উদ্বেগজনক। তবে স্বাস্থ্য খাত ও কৃষিখাতে কিছু পণ্যের দাম কমানো এবং কোল্ড স্টোরেজ ব্যয় হ্রাস করাকে ইতিবাচক উদ্যোগ হিসেবে দেখা যেতে পারে।
জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসা ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাজেটে যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে, তা প্রশংসাযোগ্য হলেও বরাদ্দ বাড়ানো দরকার বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
তিনি অভিযোগ করেন, বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার জন্য বাজেটে কোনো সুস্পষ্ট পরিকল্পনা নেই, বরং কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাড়ানো হয়েছে, যা অসাংবিধানিক এবং অনৈতিক। এটি অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত।
শেষে তিনি আশা প্রকাশ করেন, “সরকার এ বাজেটকে আরও জনকল্যাণমুখী করার জন্য আয়ের উপর কর হ্রাস ও সামাজিক খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করবেন। আমরা বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনা করে জাতির সামনে পরবর্তীতে আমাদের পূর্ণাঙ্গ অবস্থান তুলে ধরব ইনশাআল্লাহ।”