
মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি দিন দিন আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান পাল্টাপাল্টি হামলা বর্তমানে তৃতীয় দিনে পৌঁছেছে, যার ফলে উভয় দেশের সামরিক এবং বেসামরিক স্থাপনাগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
শনিবার রাতভর ইরানের ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে কমপক্ষে ১০ জন নিহত হন। বিপরীতে, ইসরায়েলও ইরানের গ্যাসক্ষেত্র ও তেল শোধনাগারে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে, যার ফলে দক্ষিণাঞ্চলীয় বুশেহর অঞ্চলের দক্ষিণ পার্স গ্যাসক্ষেত্রে আগুন ধরে যায়।

ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ইরান শনিবার রাতে দুই ধাপে মোট ৭৫টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এর প্রথম দফায় ৪০টি ও দ্বিতীয় দফায় ৩৫টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। এতে বাত ইয়াম, হাইফা, তেল আবিব ও রেহভোতের মতো শহরে প্রাণহানি ঘটে ও বহু মানুষ আহত হন।
হামলার ফলে রেহভোতের ওয়েইজমান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়সহ বহু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইসরায়েলের আয়রন ডোম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এই পরিমাণ ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে বলে বিশ্লেষকেরা মন্তব্য করছেন।
এদিকে হুতি গোষ্ঠীও এবার ইসরায়েলকে নিশানা করে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এর ফলে সংঘাতে ইরানঘনিষ্ঠ গোষ্ঠীগুলোও সক্রিয়ভাবে যুক্ত হচ্ছে।
ইসরায়েল পাল্টা হামলায় ইরানের একাধিক পরমাণু স্থাপনা, ইস্পাহানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট ভবন, শিরাজের একটি ইলেকট্রনিক কারখানা এবং কেরমানশাহের একটি ঘোড়ার আস্তাবলে হামলা চালায়। এতে ৫০-৬০টি ঘোড়ার মৃত্যু হয়।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী জানায়, গত তিন দিনে তারা ৪৪টি ড্রোন ধ্বংস করেছে। অপরদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ইসরায়েলের হামলায় ১২৮ জন নিহত হয়েছেন এবং আহতের সংখ্যা ৯০০ ছাড়িয়েছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কূটনৈতিক উদ্যোগ নিয়েছে বিভিন্ন দেশ। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন, সৌদি যুবরাজ সালমান, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। এ ছাড়া জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির লক্ষ্যে আলোচনায় যুক্ত হয়েছেন।
ইরানের সেনাপ্রধান এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, যদি ইসরায়েল হামলা বন্ধ করে, তবে ইরানও প্রতিক্রিয়া বন্ধ করবে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু অবশ্য বলেছেন, ইরানকে এর মূল্য চোকাতে হবে।
এই পরিস্থিতিতে ইরান কোন পথে হাঁটবে, তা নিয়ে বিশ্লেষকেরা বলছেন—ইরান সামরিক প্রতিরোধের পাশাপাশি কূটনৈতিকভাবে সমর্থন সংগ্রহ করতে পারে। কেউ কেউ মনে করছেন, পরমাণু অস্ত্র অর্জনের দিকেও ইরান ঝুঁকতে পারে।