ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধ সারা বিশ্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে-শেহবাজ

কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ এনে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে অভিযান চালায় পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে এবং পাকিস্তানের অভ্যন্তরে।

জবাবে পাকিস্তানও পাল্টা হামলা চালায় ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে এবং ভারতের অভ্যন্তরে। দু’দেশের এমন পাল্টাপাল্টি হামলায় উপমহাদেশে প্রায় যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়। শেষ পর্যন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছায়।

এই যুদ্ধবিরতিকে বিজয় হিসেবে ঘোষণা দিয়ে শুক্রবার (১৬ মে) পাকিস্তানে পালিত হয় ‘ইয়াওম-ই-তাশাক্কুর’ বা ‘ধন্যবাদ জ্ঞাপনের দিন’। ইসলামাবাদে আয়োজিত বিশেষ এক অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মিয়া শেহবাজ শরিফ বলেন, “আমরা যুদ্ধ জিতেছি, তবে শান্তি চাই। শত্রুকে শিক্ষা দিয়েছি, কিন্তু আগ্রাসনের পক্ষে নই।”

তিনি আরও বলেন, “ভারত ও পাকিস্তান অতীতে তিনবার যুদ্ধ করেছে, কিন্তু তাতে কেউ লাভবান হয়নি। বরং ১৬০ কোটির বেশি মানুষের জীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে।”

শেহবাজ ভারতকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, কাশ্মীরসহ সব বিরোধ নিষ্পত্তি করে দুই দেশ বাণিজ্য ও সন্ত্রাসবিরোধী সংগ্রামে একসঙ্গে কাজ করতে পারে। তিনি জানান, সন্ত্রাসবাদে পাকিস্তানে ৯০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং প্রায় ১৫০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে।

শেহবাজ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “ভারত ও পাকিস্তান দুটোই পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র। এই দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ হলে তা শুধু উপমহাদেশ নয়, সারা বিশ্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।”

তিনি জানান, ৯ মে রাতে ভারতীয় বিমানবাহিনী পাকিস্তানের অভ্যন্তরে হামলা চালায়। তখনই জরুরি বৈঠকে সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরসহ শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে পাল্টা হামলার অনুমোদন দেন তিনি।

পাকিস্তানি বিমানবাহিনী পরে পাঠানকোট, উদমপুরসহ ভারতের কয়েকটি সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালায়। শেহবাজের দাবি, পাকিস্তান ৬টি ভারতীয় বিমান ধ্বংস করে, যার মধ্যে ৩টি ছিল রাফাল যুদ্ধবিমান।

‘ইয়াওম-ই-তাশাক্কুর’ উপলক্ষে রাত ১২টা ১ মিনিটে ইসলামাবাদে ৩১টি তোপধ্বনি দিয়ে আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। প্রাদেশিক রাজধানীগুলোতেও ছিল ২১টি করে তোপধ্বনি। জাতীয় পতাকা উত্তোলন, র‌্যালি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদযাপন হয় দিনটি।

শেহবাজ বলেন, “আমাদের সাহসী শাহীনরা শত্রুকে উপযুক্ত জবাব দিয়েছে। সশস্ত্র বাহিনীর পেশাদারিত্ব, সাহস ও দায়িত্ববোধের কারণেই আমরা বিজয় অর্জন করেছি। তবে আমাদের মূল লক্ষ্য টেকসই শান্তি নিশ্চিত করা।”

অনুষ্ঠান শেষে তিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা মোহাম্মদ আসিফ ও সেনাপ্রধানের সঙ্গে রাওয়ালপিন্ডির সামরিক হাসপাতালে যান এবং আহত সৈনিক ও নাগরিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর শহিদ স্কোয়াড্রন লিডার উসমান ইউসুফের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহানুভূতি জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *