
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত ও সমমনা দলগুলোর মধ্যে উদ্বেগ ও শঙ্কা বেড়েছে। তাদের অভিযোগ, নির্বাচন নিয়ে নানা ধরনের টালবাহানা চলছে। সরকারের পক্ষ থেকেও বিষয়টি স্পষ্টভাবে জানানো হচ্ছে না যে কবে নাগাদ এই প্রত্যাশিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কখনো বলা হচ্ছে, সব প্রস্তুতি ডিসেম্বরের মধ্যেই সম্পন্ন করা হবে, আবার কখনো শোনা যাচ্ছে, ২০২৬ সালের জুনের আগে নির্বাচন শেষ হবে না।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং তাদের আন্দোলনে যুক্ত সমমনা দলগুলোর মধ্যে শঙ্কা ও উদ্বেগ বাড়ছে। তাদের অভিযোগ, নির্বাচন প্রসঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে নানা রকমের টালবাহানা চলছে। এখনো পর্যন্ত স্পষ্টভাবে জানানো হয়নি, কবে অনুষ্ঠিত হবে এ বহুল প্রত্যাশিত নির্বাচন। কখনো বলা হচ্ছে ডিসেম্বরের মধ্যে প্রস্তুতি শেষ হবে, আবার কখনো শোনা যাচ্ছে, ২০২৬ সালের জুনের মধ্যেই নির্বাচন হবে।
সরকারের উপদেষ্টাদের বক্তব্যেও মিল পাওয়া যাচ্ছে না; কেউ কেউ আবার আগামী পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার ইচ্ছার কথাও প্রকাশ করছেন। নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি ‘সংস্কার’র অজুহাতে নির্বাচন পিছিয়ে দিতে চায় বলে অভিযোগ উঠেছে। একইভাবে জামায়াতে ইসলামিসহ আরও কয়েকটি দলের অবস্থানও পরিষ্কার নয়।
এই পরিস্থিতিতে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করছেন আদৌ সময়মতো নির্বাচন হবে কি না। পাশাপাশি দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের গন্ধও পাচ্ছেন কেউ কেউ। বিএনপির নীতিনির্ধারক এবং সমমনা দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে বলেছেন, “বিএনপির বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা চলছে। আমি আট মাস আগেই সবাইকে সতর্ক করেছিলাম। এখন দেখা যাচ্ছে, একটি অদৃশ্য শক্তি বিএনপি, দেশ, নির্বাচন ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়েছে এবং তাদের সঙ্গে নতুন প্রতিপক্ষও যোগ দিচ্ছে। তবে বিএনপির তাদের মোকাবিলার সামর্থ্য রয়েছে। তাই আমাদের সতর্ক থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে।”
১৬ এপ্রিল বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দ্বিতীয়বারের মতো বৈঠক করে। সেখানে তারা জাতীয় নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ ও রোডম্যাপ জানতে চান। তবে প্রধান উপদেষ্টা কোনো নির্দিষ্ট সময়সূচি দেননি, শুধু জানান, নির্বাচন ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে জুন ২০২৬ সালের মধ্যে হবে। এরপর থেকেই বিএনপি নেতারা সরকারের আচরণকে রহস্যজনক মনে করছেন।
বিএনপি এবং সমমনা দলগুলোর নেতাদের আশঙ্কা, নির্বাচন বিলম্বিত করার পেছনে দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্র রয়েছে। বিশেষ করে যেসব দল নির্বাচনে ৫ থেকে ১০ শতাংশের বেশি ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা নেই, তারা নির্বাচনী প্রক্রিয়া বিলম্বিত করতে চায়। অনির্বাচিত সরকারের সুযোগ ভোগকারীদের নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় থাকার সুবিধা থাকায় তারা ভোট চান না বলেও বিএনপির নেতারা অভিযোগ করেছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা সিটির সাবেক মেয়র মির্জা আব্বাস বলেন, “নির্বাচন দ্রুত হবে বলে কোনো লক্ষণ দেখছি না। প্রধান উপদেষ্টা একবার বললেন ডিসেম্বরে, আবার বললেন জুনে হবে। এতে আমাদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। আমরা চাই, সময়মতো নির্বাচন হোক এবং জনমনে কোনো ধোঁয়াশা না থাকুক।”
আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “১৬ এপ্রিলের বৈঠকে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারিনি। দুই মাস পার হয়ে গেলেও সরকার নির্বাচন নিয়ে কোনো পরিষ্কার ঘোষণা দেয়নি। এতে জনমনে আরও সন্দেহ তৈরি হয়েছে।”
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করে বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন ইস্যুতে টালবাহানা করছে। অথচ জনগণ তাদের সমর্থন দিয়েছে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের জন্য। তাই দ্রুত সংস্কার সম্পন্ন করে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।”
জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রবও দ্রুত রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “সংস্কার এবং নির্বাচন একে অপরের পরিপূরক। তাই একটি সমন্বিত রোডম্যাপ প্রণয়ন জরুরি।”
এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ বলেন, “সংস্কারের অজুহাতে সরকার সময় নষ্ট করছে। জনগণের মধ্যে তৈরি হওয়া উদ্বেগ দূর করতে দ্রুত নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা দরকার।”
ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, “ডিসেম্বরে নির্বাচন না হলে জুনেও সম্ভব হবে না, কারণ এরপর ধর্মীয় উৎসব ও পাবলিক পরীক্ষাগুলো শুরু হবে। তাই দ্রুত পরিষ্কার ঘোষণা দেওয়া প্রয়োজন।”