
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে দেশজুড়ে যেমন আগ্রহ, তেমনি রয়েছে উদ্বেগ ও শঙ্কা— বলেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “বিএনপি ৬টি সংস্কার কমিশনের কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহণ করছে এবং প্রতিদিনের আলোচনা সভায় গঠনমূলকভাবে যুক্ত রয়েছে। আমরা অনেক বিষয়ে ছাড় দিয়েও ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে চলেছি।”
তিনি অভিযোগ করে বলেন, “সংস্কার কমিশনগুলোর আলোচনা শেষে দেওয়া প্রস্তাবগুলোর বিপরীতে নতুন প্রস্তাব উত্থাপন এবং অচলাবস্থার সৃষ্টি কার্যক্রমে বিলম্ব আনছে। নির্বাচিত সংসদ ও সরকারের ক্ষমতা খর্ব করে রাষ্ট্র কাঠামোকে দুর্বল করার যে কোনো প্রস্তাবে আমরা যুক্তিসঙ্গত বিরোধিতা করছি, যা প্রকৃতপক্ষে সংস্কার প্রক্রিয়াকেই রক্ষা করে।”
কমিশনভিত্তিক বিএনপির অবস্থান:
- পুলিশ সংস্কার কমিশন: এখনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা না হলেও, র্যাব বিলুপ্তিসহ অধিকাংশ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছার ইঙ্গিত।
- দুদক সংস্কার: ৪৭টি প্রস্তাবের মধ্যে ৪৬টিতে বিএনপি একমত, ২৯নং সুপারিশে আইনি অনুমোদন বাদ দিয়ে বিচারিক অনুমতির পক্ষে মত।
- জনপ্রশাসন সংস্কার: ২০৮টি প্রস্তাবে ১৮৭টিতে একমত, ৫টিতে আংশিক, ১১টিতে মতভেদ (প্রদেশ সৃষ্টি ও প্রশাসনিক পদোন্নতি ইস্যু)।
- বিচার বিভাগীয় সংস্কার: ৮৯টির মধ্যে ৬২টিতে একমত, ৯টি আংশিক, ১৮টিতে যুক্তিসহ ভিন্নমত।
- নির্বাচনী ব্যবস্থা: ২৪৩টি প্রস্তাবের মধ্যে ১৪১টিতে সম্মতি, ১৪টিতে আংশিক, ৬৪টিতে পরিমার্জনসহ সম্মতি, ২৪টিতে মতভেদ।
- সংবিধান সংস্কার: ১৩১টি প্রস্তাবে অধিকাংশে একমত, ৭০ অনুচ্ছেদ ও প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্ধারণে বিএনপির ছাড়।
মির্জা ফখরুল আরও জানান, বিএনপি সংসদে বিরোধী দলের জন্য সংসদীয় কমিটির সভাপতির পদ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা হ্রাস, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রবর্তন ও ন্যায়পাল আইন যুগোপযোগীকরণে একমত হয়েছে।
বিভাগীয় হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপনের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা একমত হয়েছি, তবে বাস্তবায়নের আগে বিচার বিভাগের সঙ্গে পরামর্শের প্রয়োজন রয়েছে, কারণ পূর্বে এমন পদক্ষেপ আদালত বাতিল করেছিল।”
গণতন্ত্র ও রাষ্ট্র কাঠামো বিষয়ে উদ্বেগ
ফখরুল বলেন, “জনগণের প্রতিনিধিত্ব ব্যতীত বড় ধরনের সাংবিধানিক পরিবর্তন গ্রহণযোগ্য নয়। ব্যক্তি বা কোনো কমিশনের এককভাবে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই।”
তিনি বিএনপির ঐক্যের ওপর জোর দিয়ে বলেন, “বিএনপি শত শহীদের রক্ত, গুম-খুনের শিকার কর্মীদের আত্মত্যাগ আর কোটি কর্মীর দুঃখ-শোককে শক্তিতে রূপান্তর করেছে। আমরা ফ্যাসিবাদ রোধে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করছি এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।”
শেষ মন্তব্যে তিনি বলেন:
“আমরা যেন দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে ৯০’র ছাত্র গণঅভ্যুত্থান ও ২০২৪ সালের আন্দোলনের চেতনা ধারণ করে বৈষম্যহীন ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার দায় পালন করি।”