গণ–অভ্যুত্থানে পদত্যাগে অনীহা, সামরিক পরামর্শে শেখ হাসিনার প্রতিক্রিয়া

গত বছরের ৫ আগস্ট সকালে গণ–অভ্যুত্থানের সময় গণভবনে এক নাটকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, যখন সামরিক কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শান্তিপূর্ণভাবে পদত্যাগের অনুরোধ জানান। কিন্তু এই প্রস্তাবে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তিনি বলেন, “তাহলে তোমরা আমাকে গুলি করে মেরে ফেলো, গণভবনে কবর দিয়ে দাও।”

এই তথ্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একটি শুনানিতে প্রকাশ করেন প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি জানান, চানখাঁরপুলে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার প্রেক্ষিতে ৪ ও ৫ আগস্টের ঘটনাগুলো অভিযোগপত্রে তুলে ধরা হয়েছে।

শুনানিতে বলা হয়, ওই রাতে গণভবনে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয় যেখানে সরকার ও দলীয় শীর্ষ নেতারা এবং তিন বাহিনীর প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকটি ছিল উত্তপ্ত ও উদ্বেগজনক। শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের পরামর্শ দেন তৎকালীন প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়ভাবে তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং সেনাপ্রধানকে কঠোরভাবে বিক্ষোভ দমনের নির্দেশ দেন।

তাজুল ইসলামের মতে, এই সময় বিমানবাহিনীর প্রধান সরাসরি শেখ হাসিনাকে বলেন, “তিনি (তারিক সিদ্দিক) আপনাকে ডুবিয়েছে এবং আরও ডুবাবে।”

শেখ হাসিনাকে কঠোর অবস্থানে থাকার জন্য উৎসাহ দেন তথাকথিত ‘গ্যাং অব ফোর’—ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান, আনিসুল হক এবং সালমান এফ রহমান।

পরদিন সকালে এক বৈঠকে পুলিশপ্রধান জানান, বাহিনীর শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তির কারণে তারা আর দীর্ঘক্ষণ কড়া অবস্থানে থাকতে পারছে না। তখন আবারও সামরিক কর্মকর্তারা পদত্যাগের প্রস্তাব দেন, কিন্তু শেখ হাসিনা রেগে গিয়ে বলেন, “তাহলে গুলি করে মেরে ফেলো।”

শেষপর্যন্ত, শেখ রেহানার অনুরোধ ও ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের মধ্যস্থতায় শেখ হাসিনা পদত্যাগে সম্মত হন। তবে সেনাপ্রধানের বক্তব্য প্রচারের আগে তিনি দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যান।

ঘটনার বর্ণনায় চিফ প্রসিকিউটর বলেন, পরিস্থিতি এতটাই জটিল ছিল যে গণভবনের উদ্দেশে লাখো মানুষের মিছিল এগিয়ে আসছিল এবং সময় সংকট ছিল তীব্র। তাই সিদ্ধান্ত দ্রুত নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে মাত্র ৪৫ মিনিট সময় দেওয়া হয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *