বিশ্ববাজারে ডলারের দাম কমছে, ২০ বছরে সর্বনিম্নে নেমে যাওয়ার আশঙ্কা

বাণিজ্য ডেস্ক

চলতি বছরটা ডলারের জন্য ভালো যাচ্ছে না। বিশ্ববাজারের ডলারের বিনিময় হার কমছেই। অন্যদিকে সোনার দাম বাড়ছে। এই দুটির মধ্যে সাধারণত বিপরীতমুখী সম্পর্ক দেখা যায়।

বিশ্বের সমজাতীয় ছয়টি মুদ্রার বিপরীতে ডলারের মান কত, তা নিরূপণ করার জন্য ডলার ইনডেক্স বা সূচক প্রণয়ন করা হয়েছে। সেই ডলার ইনডেক্সের মান আড়াই মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। এই সূচকের মান এখন ৯৭ দশমিক ৭৬৭। রয়টার্স

এখানেই শেষ নয়, যেভাবে ডলারের মান পড়ছে, তাতে চলতি বছর এই সূচকের ৯ দশমিক ৯ শতাংশ পতন হওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সেটি হলে ২০০৩ সালের পর এটাই হবে ডলারের সর্বোচ্চ দরপতন।

যে কারণে সোনার দাম বাড়ে, ঠিক সেই কারণে ডলারের মান পড়ে। সেটি হলো মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের নীতি সুদহার কমানো। চলতি বছর ইতিমধ্যে ফেড একাধিকবার নীতি সুদহার কমিয়েছে। বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, ফেড আগামী বছরও নীতি সুদহার কমাবে। তৃতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশাতীত প্রবৃদ্ধি হলেও বিনিয়োগকারীরা আশা ছাড়ছেন না।

চলতি বছর ডলারের দাম অনেকটাই ওঠানামা করেছে। মূলত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাগলাটে নীতির কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। মোদ্দাকথা, এ বছর বিশ্ববাজারে ছিল চরম অনিশ্চয়তা। সেই সঙ্গে ফেডারেল রিজার্ভের ওপর ট্রাম্পের প্রভাব বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে বিনিয়োগকারীরা ফেডের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

বহুজাতিক এইচএসবিসি ব্যাংকের বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ডিসেম্বর মাসে ডলারের এ দুর্বলতার কারণ নিছক নীতিগত নয়; বরং ফেডের স্বাধীনতা নিয়ে সৃষ্টি হওয়া উদ্বেগ। সেই সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখছে। তারা বরং নীতিসুদ বাড়ানোর পথে আছে। এ বাস্তবতায় ডলারের মান পড়ে যাচ্ছে।

এর বিপরীতে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছর ইউরোর মান ১৪ শতাংশ বেড়েছে। সম্প্রতি ডলারের বিপরীতে তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে আছে ইউরো। এক ইউরোর বিনিময়ে এখন ১ দশমিক ১৮০৬ ডলার পাওয়া যাচ্ছে। ফলে ডলারের অবস্থা যেখানে ২০০৩ সালের পর সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে, সেখানে ইউরোর মান ২০০৩ সালের পর সবচেয়ে ভালো অবস্থায়।

এর কারণও আছে। গত সপ্তাহে ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রাখা হবে। সেই সঙ্গে তাদের পূর্বাভাস, প্রবৃদ্ধির ও মূল্যস্ফীতির হার বাড়বে।

এদিকে ইউরোর পাশাপাশি পাউন্ডের মানও তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। অস্ট্রেলীয় ও নিউজিল্যান্ড ডলারের মানও ঊর্ধ্বমুখী। তবে জাপানি মুদ্রা ইয়েনের মান নিম্নমুখী।

বাংলাদেশের বাজারেও ডলারের দাম কয়েক মাস ধরে স্থিতিশীল। প্রতি ডলারের বিপরীতে এখন ১২২ টাকার কিছু বেশি পাওয়া যাচ্ছে।

নীতি সুদহারের সঙ্গে সম্পর্ক

ফেডের নীতি সুদহার কমলে ডলারের মান সাধারণত দুর্বল হয়। কেননা এতে ডলারে বিনিয়োগের আকর্ষণ কমে যায়। সুদ কম মানে যুক্তরাষ্ট্রের বন্ড ও আর্থিক সম্পদে বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্তি কমে যাওয়া। ফলে বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীরা বেশি মুনাফার খোঁজে অন্য দেশের মুদ্রা ও বাজারের দিকে ঝুঁকে পড়েন। এতে ডলারের চাহিদা কমে যায়। পাশাপাশি সুদ কমানোর সিদ্ধান্তের অর্থ হলো অর্থনীতিতে তারল্য বাড়বে। ফলে ডলারের সরবরাহ বৃদ্ধির প্রত্যাশা তৈরি হয়। আবার অন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদ না কমালে বা বাড়ালে সুদের ব্যবধান কমে যায়। এসব মিলিয়ে ডলারের শক্তি ক্ষয় হয়।

ডলারে বিনিয়োগ আকর্ষণীয় না হলে বিনিয়োগকারীরা তখন সোনার দিকে ঝুঁকে পড়েন। চলতি বছর যে সোনার দাম ৬৮ শতাংশ বেড়েছে, ডলারের শক্তিক্ষয় তার মূল কারণ।

উন্নয়নশীল দেশের সুবিধা

বিশ্ববাজারে ডলার দুর্বল হলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর ডলারে নেওয়া ঋণের বোঝা হালকা হয়। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমে। আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণে থাকায় মুদ্রাস্ফীতি সামাল দেওয়া সহজ হয়। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীরা তুলনামূলক বেশি মুনাফার আশায় এসব দেশের বাজারে পুঁজি বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হন। এতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর চাপ কমে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *