সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে মাগুরায় পৌঁছেছে শিশুটির মরদেহ, জানাজা সম্পন্ন

সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে মাগুরায় পৌঁছেছে শিশুটির মরদেহ, জানাজা সম্পন্ন
সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে শিশুটির মরদেহ মাগুরায় নেওয়া হয়। সন্ধ্যায় সেটি মাগুরা স্টেডিয়ামে অবতরণ করে

মাগুরায় অচেতন অবস্থায় উদ্ধার হওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া শিশুটির মরদেহ সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে মাগুরায় আনা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে হেলিকপ্টারটি মাগুরা স্টেডিয়ামে অবতরণ করে। পরে সন্ধ্যা সাতটায় শহরের নোমানী ময়দানে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

শিশুটির মরদেহের সঙ্গে হেলিকপ্টারে করে তার মা এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতারও মাগুরায় আসেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ‘রাষ্ট্র ও সরকার এ ঘটনাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। এত ছোট্ট একটি মেয়ের ওপর এমন নির্মমতা মেনে নেওয়া যায় না। শিশুটি আমাদেরই মেয়ে, তাই আমরা বিষয়টি যথাযথ গুরুত্ব দিয়েই দেখছি।’

সন্ধ্যায় প্রায় একই সময়ে আরেকটি হেলিকপ্টারে মাগুরায় আসেন জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম ও খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক।

সন্ধ্যা সাতটার দিকে শহরের নোমানী ময়দানে শিশুটির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মরদেহ গ্রামে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

এর আগে, রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলা একটায় শিশুটির মৃত্যু হয়। সিএমএইচের পেডিয়াট্রিক নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক কর্নেল নাজমুল হামিদ জানান, সকালে শিশুটির দুই দফায় ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ (আকস্মিকভাবে হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাওয়া) হয়। সিপিআর দেওয়ার পর প্রথমে তার হৃৎস্পন্দন ফিরে এলেও দুপুর ১২টায় আবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। এ সময় সিপিআর দেওয়া হলেও শিশুটির হৃৎস্পন্দন ফেরানো সম্ভব হয়নি। এরপর বেলা একটায় তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে মাগুরায় পৌঁছেছে শিশুটির মরদেহ, জানাজা সম্পন্ন
সন্ধ্যা সাতটার দিকে শহরের নোমানী ময়দানে শিশুটির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মরদেহ শিশুটির গ্রামে নিয়ে যাওয়ার কথা জানায় প্রশাসন

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, মাগুরায় নির্যাতনের শিকার শিশুটি আজ বেলা একটায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেছে। সর্বাধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা প্রয়োগ এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও শিশুটিকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। আজ সকালে তিনবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হওয়ার পর দুবার স্থিতিশীল করা গেলেও তৃতীয়বার হৃৎস্পন্দন ফিরে আসেনি।

পুলিশ ও শিশুটির পরিবার সূত্রে জানা যায়, কয়েক দিন আগে বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল শিশুটি। গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাকে অচেতন অবস্থায় মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে আসেন বড় বোনের শাশুড়ি। পরে শিশুটির মা হাসপাতালে ছুটে যান। সেদিনই উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয় শিশুটিকে। সেখান থেকে রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

শুক্রবার রাতে তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। সংকটাপন্ন অবস্থায় শনিবার সন্ধ্যায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (পিআইসিইউ) থেকে সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়।

শিশুটির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর দুপুরে এলাকাবাসী ও আত্মীয়স্বজন তার বাড়িতে জড়ো হয়ে ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন। জেলার শ্রীপুর উপজেলায় শিশুটির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার বাবা ও ছোট বোন সেখানে আছেন। বাড়িতে স্বজনদের আহাজারি, প্রতিবেশীদের ভিড় এবং গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

ঘটনার পর থেকেই শিশুটির বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। মেয়ের মৃত্যুর খবরে তিনি নির্বাক হয়ে শুধু বাড়ির আঙিনায় পায়চারি করছিলেন, কারও সঙ্গে কোনো কথা বলছিলেন না।

শিশুটির চাচা (বাবার ফুফাতো ভাই) জানান, ‘আজ দুপুরে মৃত্যুর খবর পেয়েছি। এলাকায় গোরস্থানে দাফনের জন্য কবর খোঁড়ার কাজ চলছে। আমরা চাই, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *