আসাম থেকে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া ছয় ভারতীয় নাগরিক আটক

ভারতের আসাম রাজ্যের বাসিন্দা ছয়জন নাগরিককে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ-এর বিরুদ্ধে। এদের একজন, গোলাঘাট জেলার জামুগুড়ি গ্রামের বাসিন্দা ৪৮ বছর বয়সী নিজাম আহমেদ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমার জন্ম ভারতেই, সেখানেই দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছি। কিন্তু ভারতের পুলিশ ও বিএসএফ আমাদের কথা শুনলো না—জোর করে বন্দুক দেখিয়ে আমাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিলো।”

গত শুক্রবার (৩০ মে) দুপুরে লালমনিরহাটের পাটগ্রামের বুড়িমারী রেল স্টেশন এলাকায় তাদের আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। আটককৃতদের মধ্যে রয়েছেন চারজন পুরুষ ও দুইজন নারী। তাদের সবার কাছে ভারতীয় আধার কার্ডসহ পরিচয়পত্র থাকলেও, বিএসএফ তাদের কথাবার্তা শোনেনি বলে অভিযোগ করেছেন তারা।

নিজাম আরও জানান, বিজিবি ছয়জনকে আটকালেও তাদের সঙ্গে আরও ছয়জন ছিল, যারা সীমান্তে প্রবেশ করতে পারেননি। বাধ্য হয়ে তারা একটি স্কুলে আশ্রয় নেন এবং পরে বুড়িমারী রেলস্টেশনে এসে অবস্থান করেন। গত ২৮ মে থেকেই তারা স্থানীয়দের সহায়তায় দিন কাটাচ্ছেন।

আটক অন্যদের মধ্যে রয়েছেন:

  • আব্দুল গফুর (৫৬), ইসলামপুর, মেরাপানি, গোলাঘাট
  • কিসমত আলী (৬৩), দলগাঁও, দরং
  • হাফিজা বেগম (৩৫), মেরাপানি, গোলাঘাট
  • রহমত আলী (৩৫), নৌহাটি, দরং
  • নুরেজা বেগম (৪৫), মেরাপানি, গোলাঘাট

বিজিবি সূত্র জানায়, ২৮ মে আদিতমারী, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম সীমান্তে পাঁচটি পয়েন্ট দিয়ে বিএসএফ প্রায় ৫৮ জন ভারতীয় নাগরিককে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। তবে বিজিবি ও স্থানীয়দের প্রতিরোধে বেশিরভাগকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তখন সীমান্তজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং আকাশে ড্রোন ওড়ার ঘটনাও দেখা যায়।

ধারণা করা হচ্ছে, সেই সময়ই এই ছয়জন সীমান্ত অতিক্রম করে দেশের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়েন। পরে স্থানীয়দের তথ্যের ভিত্তিতে বিজিবি অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে।

আটককৃতরা দাবি করেছেন, ভারতীয় পুলিশ তাদের প্রথমে আটক করে এবং পরে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করে, এরপর জোর করে বাংলাদেশে পাঠানো হয়।

সম্প্রতি সীমান্তে ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার ঘটনা বাড়ছে। বিজিবি বলছে, বাংলা ভাষাভাষীদের বাংলাদেশি দাবি করে ভারত তাদের পুশ ইন করছে, যা আন্তর্জাতিক চুক্তির লঙ্ঘন। এ বিষয়ে বিজিবি বিএসএফের সঙ্গে পতাকা বৈঠক আহ্বান করেছে এবং কূটনৈতিক পদক্ষেপের দাবি উঠেছে।

পাটগ্রাম থানার ওসি মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, যাচাই-বাছাই শেষে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *