টোকিও, ৩০ মে ২০২৫ — বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যকার অর্থনৈতিক ও বিনিয়োগ সহযোগিতাকে আরও সুদৃঢ় করতে দুই দেশের মধ্যে আজ ছয়টি সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরিত হয়েছে। টোকিওতে সফররত প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে এই চুক্তিগুলোর সাক্ষর সম্পন্ন হয়।
এই উদ্যোগটি ছিল বাংলাদেশ-জাপান অর্থনৈতিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় পৌঁছানোর এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, যা ‘বাংলাদেশ বিজনেস সেমিনার’ এর অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত হয়।
প্রথম সমঝোতা স্মারকটি হয় জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন (JBIC) এবং বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে। এই সমঝোতায় দুই দেশ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে যৌথ প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগিতা জোরদার করার লক্ষ্যে কাজ করবে।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয় বিএসইজেড (Bangladesh SEZ Limited) এর জমি লিজ সংক্রান্ত বিষয়ে। জাপানি প্রতিষ্ঠান Onoda Inc. এবং Noxis Co. Ltd. যথাক্রমে গ্যাস মিটার এবং পোশাকের আনুষঙ্গিক পণ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে বিএসইজেড-এ কারখানা স্থাপনের জন্য জমি লিজ নেবে। Onoda Inc. ইতোমধ্যেই জাইকার সহায়তায় গ্যাস মিটার প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে এবং আরও নতুন উৎপাদন ইউনিট চালুর পরিকল্পনা করছে।
চতুর্থ সমঝোতা স্মারক হয় গ্লেফিট এবং মুসাসি সিমিতসু ইন্ডাস্ট্রি গ্লেফিট-এর যৌথ উদ্যোগে, যা বাংলাদেশের বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (BIDA) এর সঙ্গে মিলে ব্যাটারি চালিত সাইকেল এবং বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেলের উৎপাদন কারখানা স্থাপনে সহায়তা করবে।
পঞ্চম সমঝোতা স্মারক জাপানি প্রতিষ্ঠান Cipher Core Co. Ltd. এর সাথে হয়, যা বাংলাদেশে তথ্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত একটি জাতীয় পাইলট প্রকল্প চালু করবে। প্রতিষ্ঠানটি এ প্রকল্পে ২০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে, যার নেতৃত্বে আছেন খ্যাতিমান আবিষ্কারক তাকাতোশি নাকামুরা। লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে একটি কোয়ান্টাম-সক্ষম ডিজিটাল অর্থনীতিতে রূপান্তর করা।
ষষ্ঠ সমঝোতা স্মারকটি হয় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি (JICA) এবং BIDA-এর মধ্যে। এই চুক্তির আওতায় JICA বাংলাদেশের বিনিয়োগবান্ধব ‘ইন্টিগ্রেটেড সিঙ্গেল উইন্ডো প্ল্যাটফর্ম (ISWP)’ গঠনে প্রযুক্তিগত ও নীতিগত সহায়তা প্রদান করবে। এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের জন্য বিদ্যমান আলাদা আলাদা সেবাগুলো একীভূত করা হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “এই চুক্তিগুলো বাস্তবায়নই এখন আমাদের মূল কাজ। গত ১৬ বছর ধরে আমরা যে চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে গিয়েছি, তা এক ধরনের দীর্ঘমেয়াদি ভূমিকম্পের মতো। এই সময়ে আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে জাপান, একজন সত্যিকারের বন্ধু হিসেবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা ইতিহাসে প্রমাণ রাখতে চাই যে, বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগিয়ে যেতে পারে। এটি শুধু অর্থ উপার্জনের ব্যাপার নয়, মানুষের জীবন বদলে দেওয়ার বিষয়।”
জাপানের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী শিনজি টেকুচি বলেন, “বর্তমানে বাংলাদেশে ৩০০টির বেশি জাপানি কোম্পানি কাজ করছে, যা এক দশক আগের তুলনায় প্রায় ৭৫ শতাংশ বেশি।”
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জেট্রো (JETRO)-র চেয়ারম্যান ও সিইও নরিহিকো ইশিগুরো, যিনি জাপান-বাংলাদেশ বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা কমিটির (JBCCEC) চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া মারুবেনি কর্পোরেশনের নির্বাহী কর্পোরেট উপদেষ্টা এবং পরিচালকরাও অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদান করেন।
এই সমঝোতাগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যকার অর্থনৈতিক সম্পর্ক নতুন দিগন্তে পৌঁছাবে বলে আশা প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্ট সবাই।