
দেশের সব বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদারে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে নতুন বাহিনী—‘এয়ার গার্ড অব বাংলাদেশ’ (এজিবি)। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংযোগ রক্ষায় বিমানবন্দরকে নিরাপদ রাখতে এবং সম্ভাব্য হুমকি প্রতিরোধে এই বিশেষ বাহিনী গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সম্প্রতি এ বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য গঠিত হয়েছে ১২ সদস্যের একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি, যার নেতৃত্বে রয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আতাউর রহমান খান। কমিটিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সূত্র জানায়, এই উদ্যোগের পেছনে রয়েছে বিমান বাহিনীর অনুরোধ, যা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নির্দেশে বাস্তবায়নের পথে এগোচ্ছে।
নতুন বাহিনীর কাঠামো, সদস্যসংখ্যা, দায়িত্বের পরিধি, এবং কোন বাহিনী থেকে সদস্য নেওয়া হবে—এসব বিষয় কমিটির সুপারিশে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এরপরই শুরু হবে বাহিনী গঠনের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম।
বর্তমানে দেশের তিনটি আন্তর্জাতিকসহ আটটি বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় কাজ করছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মী, এপিবিএন, বিমান বাহিনী এবং আনসার সদস্যরা। তবে বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়হীনতা, দ্বন্দ্ব এবং চেইন অব কমান্ডের অভাব দীর্ঘদিন ধরেই সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এজিবি বাহিনী গঠিত হলে এসব বাহিনীর সদস্যরা একক কাঠামোর অধীনে কাজ করবেন, যা নিরাপত্তা ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ও কার্যকারিতা বাড়াবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে চলতি বছরের শুরুতে বেবিচক ‘বাংলাদেশ এয়ারপোর্ট সিকিউরিটি ফোর্স’ (বিএএসএফ) নামে একটি বাহিনী গঠনের উদ্যোগ নেয়। ১০ হাজার ৬৩২ সদস্যের প্রস্তাবিত বাহিনীর জন্য তিন ধাপে ৩৯৭ কোটি টাকার বাজেটও প্রস্তুত করা হয়। তবে পরামর্শ ছাড়া নেওয়া এই উদ্যোগে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বেবিচকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ১৭ মার্চ তারা সদর দপ্তরে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা করেন। আইকাওয়ের নিয়ম পরিপন্থী বলে দাবি করে তারা বাহিনী গঠনের বিরোধিতা করেন। এরপর বেবিচক সেই উদ্যোগ থেকে সরে আসে।
এ অবস্থায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে এজিবি গঠনের উদ্যোগ আবারও নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বেবিচকের সাবেক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) মফিদুর রহমান বলেন, “উদ্যোগটি ইতিবাচক, তবে কমিটিতে সিভিল অ্যাভিয়েশনের প্রতিনিধি রাখা উচিত ছিল। আইকাওয়ের নিয়ম অনুসরণ করে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে এগোতে হবে।”
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি বলেন, “আন্তর্জাতিক মানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এয়ার গার্ড গঠন সময়ের দাবি। এটি প্রথমে বাহিনী হিসেবে কাজ করবে, পরে অধিদপ্তরে রূপান্তর করা হবে।”
কমিটির প্রধান আতাউর রহমান খান বলেন, “মাত্র কাজ শুরু হয়েছে। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা আরও জোরদার করতেই এই উদ্যোগ।”
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের বিমানবন্দরের পরিধি যেমন বাড়ছে, তেমনি নিরাপত্তা ঝুঁকিও বাড়ছে। স্বর্ণ ও বৈদেশিক মুদ্রা পাচারসহ নানা অপরাধে বদনাম হচ্ছে দেশ-বিদেশে। জিরো টলারেন্স নীতির ঘোষণা থাকলেও বাস্তবায়নে ঘাটতি রয়েছে। অপরাধীরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে।
বেবিচক জানায়, শাহজালাল বিমানবন্দরে প্রতিদিন গড়ে ৪০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন। ৪৭টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বিমান চলাচল চুক্তি রয়েছে। বর্তমানে ৩৭টি দেশি-বিদেশি বিমান সংস্থা ফ্লাইট পরিচালনা করছে। কিন্তু নিরাপত্তা দুর্বল থাকায় যাত্রীবেশী অপরাধীরা সহজেই অপরাধ করে পার পাচ্ছে।
তৃতীয় টার্মিনাল চালুর প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এভসেক বাহিনীতে পাঁচ হাজারের বেশি জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন। তবে দীর্ঘমেয়াদে নিরাপত্তা জোরদারে এজিবি বাহিনীকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। যদিও বেবিচকের অনেক কর্মকর্তা নতুন বাহিনীর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
তাদের মতে, যেখানে এভসেক, বিমান বাহিনী, এপিবিএনসহ একাধিক সংস্থা কাজ করছে, সেখানে নতুন বাহিনী গঠনের প্রয়োজনীয়তা নেই। তবে সরকার বলছে, একক কাঠামোর মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এজিবির লক্ষ্য।