
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন দেশ রাশিয়া এখনও বিশাল পরিমাণ জ্বালানি সম্পদ ব্যবহার করে ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, যদি আগামী ৮ আগস্টের মধ্যে রাশিয়া যুদ্ধবিরতি না মানে, তাহলে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য করছে এমন যেকোনো দেশের পণ্যের উপর যুক্তরাষ্ট্র শতভাগ সেকেন্ডারি শুল্ক আরোপ করবে।
এই শুল্কের মাধ্যমে রাশিয়ার জ্বালানি রপ্তানিতে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। রাশিয়ার তেল ও গ্যাসই তাদের প্রধান রপ্তানি খাত, যার বড় ক্রেতা চীন, ভারত ও তুরস্ক। ট্রাম্প প্রশাসনের এই সেকেন্ডারি শুল্কের আগের নজির রয়েছে ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে। তবে রাশিয়ার ক্ষেত্রে এটি বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই শুল্ক কার্যকর হলে রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের সরবরাহ কমে যাবে, যা বিশ্বজুড়ে জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধি করবে। ২০২২ সালে রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনের পর বিশ্বজুড়ে তেল-গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে এই শুল্ক বিশ্ব বাজারে আরও চাপ তৈরি করবে। তবে ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ড পরিমাণ তেল উৎপাদনের কারণে দাম বৃদ্ধিতে তিনি বেশি উদ্বিগ্ন নন।
রাশিয়া ইতোমধ্যে নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ‘শ্যাডো ফ্লিট’ নামের একটি ট্যাংকার নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে, যা তাদের তেলের উৎস গোপন রাখতে সাহায্য করছে। তবে সেকেন্ডারি শুল্ক বজায় রাখা সহজ হবে না বলেও সতর্ক করেছেন নিষেধাজ্ঞা বিশেষজ্ঞরা।
ভারত রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল ক্রেতা হিসেবে উল্লেখযোগ্য। ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ হলে ভারতের পণ্যের আমদানি দুর্ভোগে পড়তে পারে এবং ভারতের ব্যবসায়িক মন্দা সৃষ্টি হতে পারে। এর পাশাপাশি, অ্যাপলসহ অন্যান্য মার্কিন কোম্পানির ভারতে তৈরি আইফোনের দামও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চীনের মতো বড় ক্রেতার ক্ষেত্রে সেকেন্ডারি শুল্ক আরোপ করা আরও জটিল। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্য বিবেচনায় এটি বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুল্ক আরোপের ফলে চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্কের অবনতি ঘটতে পারে এবং মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও তুরস্কও রাশিয়ার বড় ক্রেতা হলেও ২০২৭ সালের মধ্যে রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানির সম্পূর্ণ বন্ধের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে ইউরোপ-মার্কিন শুল্ক নিয়ে উদ্বেগও রয়েছে, কারণ শুল্ক বৃদ্ধির ফলে ইউরোপীয় রপ্তানিকারকদের ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রাশিয়ার জন্য চলমান অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও যুদ্ধের প্রভাব দীর্ঘমেয়াদে বড় সংকট ডেকে আনতে পারে। তবে রাশিয়ার সরকারের সাম্প্রতিক তথ্য প্রকাশে শীতলতা এবং প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয়ের বৃদ্ধি এই সংকটের গভীরতা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দিতে পারছে না।
অন্যদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তার মিত্র দেশগুলো থেকে আর্থিক ও সামরিক সহায়তা চেয়ে আসছেন, যা যুদ্ধের ফলে অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির চাপকে প্রতিফলিত করে।
ট্রাম্পের সেকেন্ডারি শুল্কের লক্ষ্য হচ্ছে রাশিয়ার অর্থপ্রবাহ কমিয়ে ইউক্রেনে যুদ্ধের অবসান ঘটানো। এই পদক্ষেপের সফলতা ও প্রভাব বিশ্ব রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।