সংস্কার না হলে কলঙ্কিত নির্বাচন ফিরবে: চরমোনাই পীর

“যদি প্রয়োজনীয় সংস্কার না হয়, তবে অতীতের কলঙ্কিত নির্বাচনের ইতিহাস আবার ফিরে আসবে”—এমন সতর্ক বার্তা দিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি রেজাউল করিম চরমোনাই পীর।

রোববার (২৫ মে) রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে তিনি এই মন্তব্য করেন।

চরমোনাই পীর বলেন, “দেশ ও জনগণের স্বার্থে আপনাকে (ড. ইউনূস) সামনে এনেছি একটি সুন্দর ভবিষ্যতের আশায়। কিন্তু আপনার ওপর যে মানসিক চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে তা আমরা উপলব্ধি করছি। আপনাকে সঠিকভাবে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না, সেটাও পরিষ্কার। আপনি যদি হেরে যান, আমরাও হেরে যাবো। তবে আপনাকে বলছি—মাঝপথে আমাদের ছেড়ে যাওয়া চলবে না।”

সংস্কার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়

তিনি আরও বলেন, “যদি প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সংস্কার না করা হয়, তাহলে সামনে যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তা পেশি শক্তি ও কালো টাকার দাপটে প্রভাবিত হবে। তখন আবার সেই কলঙ্কিত নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি হবে, যা আমরা কেউই চাই না।”

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গে তিনি জানান, উপদেষ্টা পরিষদের মেয়াদ ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারিত রয়েছে বলে আশ্বস্ত করেছেন ড. ইউনূস।

আলোচনায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য নেতাদের বক্তব্য

বৈঠকে আরও অংশ নেন জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মনজুরুল ইসলাম আফেন্দী, হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব সাজিদুর রহমান এবং গণঅধিকার পরিষদের নেতা নুরুল হক নূর।

মনজুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, “আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি, জাতি অনেক আশা নিয়ে আপনাকে বসিয়েছে। আপনার দায়িত্ব হলো চক্রান্ত রুখে দিয়ে একটি নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করা।”

হেফাজতের মহাসচিব সাজিদুর রহমান বলেন, “আমরা বলেছি, একাত্মতা বজায় রাখলে ফ্যাসিবাদ কিছুই করতে পারবে না। একই সঙ্গে আমরা অবাক হয়েছি—হেফাজতের আন্দোলনের সময় যে মামলা হয়েছিল, তা এখনো প্রত্যাহার হয়নি। আগামী ছয় মাসের মধ্যে এসব মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছি।”

তিনি আরও বলেন, “নারী সংস্কার কমিশন থেকে নারীদের নিয়ে যে প্রস্তাব এসেছে, তা বাংলাদেশের সাধারণ নারীদের প্রতিফলন করে না। কোরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন পাস হলে আমরা মেনে নেবো না।”

নুরুল হক নূর বলেন, “আমরা বলেছি, উপদেষ্টা পরিষদে বিতর্কিত ব্যক্তিদের সরানো হোক—বিশেষ করে যারা রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতায় রয়েছেন। এটি সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষায় সহায়ক হবে।”

তিনি আরও বলেন, “একটি মহল সামরিক বাহিনী ও প্রশাসনকে সরকারের বিপরীতে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে। আমরা উপদেষ্টাকে বলেছি, এই বিষয়ে সচেতন থেকে কাজ করতে হবে।”

নির্বাচনের সময়সূচি নিয়েও মত দেন নূর। তিনি বলেন, “ডিসেম্বর থেকে জুনের যে সময় দেওয়া হয়েছে, তা অস্পষ্ট। আমরা একটি নির্দিষ্ট মাস চাই—যে মাসে নির্বাচন হবে, তা জনগণকে জানাতে হবে।”

উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন নিয়ে ইঙ্গিত

বৈঠকে উপদেষ্টা পরিষদের পুনর্গঠনের প্রসঙ্গও উঠে আসে। এ বিষয়ে সরাসরি কিছু না বললেও, প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন—বর্তমান উপদেষ্টাদের কর্মদক্ষতা বিবেচনায় নিয়ে পর্যালোচনা চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *