ফেসবুক পোস্টে স্যাড’ রিঅ্যাক্ট : মৎস্য অধিদপ্তরের পাঁচ কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ

প্রবাসী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খানের একটি ফেসবুক পোস্টে প্রতিক্রিয়া জানানো এবং মন্তব্য করায় মৎস্য অধিদপ্তরের পাঁচজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেছে অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় প্রশাসন মহলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে এবং তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।

নোটিশ পাওয়া কর্মকর্তারা হলেন—
১. সহকারী পরিচালক এ এস এম সানোয়ার রাসেল
২. জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক মো. সালমুন হাসান (মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ দপ্তর)
৩. জ্যেষ্ঠ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রওনক জাহান (আখাউড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
৪. সহকারী প্রকল্প পরিচালক মো. ফরিদ হোসেন (ইলিশসম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প)
৫. সহকারী প্রধান আবু মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান

সূত্র জানায়, চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস উর রহমানকে ‘সচিব’ করার সুপারিশ করে একটি আধা সরকারি চিঠি (ডিও লেটার) পাঠানো হয়। চিঠিটি প্রেরণ করেন প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। এ নিয়েই ১৪ এপ্রিল একটি পোস্ট দেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খান, যেখানে তিনি অতিরিক্ত সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেনের অতীত কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং পদোন্নতির বিরোধিতা করেন।

সেই পোস্টে মন্তব্য ও রিঅ্যাক্ট (বিশেষ করে ‘স্যাড’) করায় ৪ মে সংশ্লিষ্ট পাঁচ কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর জন্য নোটিশ দেন মৎস্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মো. আবদুর রউফ।

নোটিশে বলা হয়, “সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা, ২০১৯ অনুযায়ী আপনাদের আচরণ শাস্তিযোগ্য অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। কেন আপনার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা তিন কার্যদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে ব্যাখ্যা দিন।”

প্রথম আলোকে দেয়া এক বক্তব্যে নোটিশ পাওয়া দুই কর্মকর্তা নোটিশ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এবং জানিয়েছেন, তারা সময়মতো জবাব দিয়েছেন। যদিও এখনো তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

অন্যদিকে, জুলকারনাইন সায়ের খান ১৭ মে শনিবার আরও একটি পোস্টে লেখেন, “এই পোস্টে ‘স্যাড’ প্রতিক্রিয়া দেওয়ার জন্যও মৎস্য অধিদপ্তরের পাঁচ কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে—এটা একেবারে অবিশ্বাস্য ঘটনা।”

এ ঘটনায় সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই বলছেন, ব্যক্তিগত মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং ফেসবুকে নিরীহ প্রতিক্রিয়া জানানোয় সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ প্রমাণ করে, দেশে প্রশাসনিক সহনশীলতার ঘাটতি রয়েছে। অপরদিকে, কিছু বিশ্লেষক বলছেন, সরকারি চাকরির শৃঙ্খলা রক্ষায় এমন পদক্ষেপ প্রশাসনিক নিয়ম মেনেই নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবদুর রউফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নোটিশ দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার কিংবা অস্বীকার—কোনোটিই করেননি। পরে যোগাযোগ করেও তার কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

এই ঘটনার মাধ্যমে একদিকে যেমন সরকারি কর্মচারীদের সামাজিক মাধ্যমে আচরণ নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, অন্যদিকে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং প্রশাসনিক প্রতিক্রিয়া—এই দুইয়ের ভারসাম্য নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *