রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে ‘নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রা’ কর্মসূচি থেকে নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং গুজব ও ধর্মীয় উসকানির বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জোর দাবি জানানো হয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে পাঠ করা হয় একটি ঘোষণাপত্র, যেখানে নারীর অধিকার, সংখ্যালঘু ও প্রান্তিক জনগণের সুরক্ষা এবং নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি সংক্রান্ত বিষয়গুলো গুরুত্ব পায়। ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেন শহীদ পরিবারের দুই সদস্য ও একজন মানবাধিকারকর্মী।
ঘোষণায় বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারকে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা, গুজব, এবং ধর্মকে অপব্যবহারের মাধ্যমে আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা রুখতে হবে। একই সঙ্গে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ছড়ানো অপপ্রচারেরও মোকাবিলা করতে হবে।
এছাড়া, ঘোষণাপত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়—তাদের নির্বাচনী অঙ্গীকারে নারী, শ্রমিক, জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু, ভাষাগত ও লিঙ্গগত বৈচিত্র্যের অধিকার রক্ষার সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি থাকতে হবে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে নারী প্রার্থীর অংশগ্রহণ শতকরা ৩৩ ভাগ নিশ্চিত করার দাবিও জানানো হয়।
নারী ও প্রান্তিক জনগণের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয় সরকারের প্রতি।
ঘোষণাপত্র পাঠকারীরা বলেন, নারীর বিরুদ্ধে বৈষম্য ও সহিংসতা তারা আর বরদাশত করবেন না। ধর্ম ও সংস্কৃতিকে দমনমূলক অস্ত্র বানানোর প্রচেষ্টা রুখে দেওয়া হবে।
তারা আরও বলেন, বাংলাদেশের বহুজাতিক সংস্কৃতি ও বিশ্বাসকে উপেক্ষা করে গুটিকয়েক মানুষের সংকীর্ণ মতামতকে চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। অধিকার ও ধর্মকে পরস্পরের প্রতিপক্ষ বানানোর কোনো প্রচেষ্টা তারা সফল হতে দেবেন না।
‘নারীর ডাকে মৈত্রী যাত্রা’ কর্মসূচিতে অংশ নেন প্রগতিশীল নারী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাংস্কৃতিককর্মী, শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। কর্মসূচির শুরুতে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়।
এই কর্মসূচিতে অংশ নেয়া সংগঠনগুলোর মধ্যে ছিল: বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, নারী সংহতি, গার্মেন্টস শ্রমিক মুক্তি আন্দোলন, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, নারীমুক্তি কেন্দ্র, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামসহ আরও অনেকে।
ঘোষণাপত্র পাঠের পর একটি মিছিল অনুষ্ঠিত হয়, যা মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ থেকে শুরু হয়ে ইন্দিরা রোড হয়ে আবার মানিক মিয়ায় ফিরে আসে। স্লোগান ছিল: ‘লড়াই লড়াই লড়াই চাই/লড়াই করে বাঁচতে চাই’, ‘পাহাড় থেকে সমতলে/লড়াই হবে সমান তালে’ ইত্যাদি।