কাশ্মীর যেন বিশ্বের আরেকটি মুক্তবিহীন কারাগার

কাশ্মীর যেন বিশ্বের আরেকটি মুক্তবিহীন কারাগার

কাশ্মীর: আরেকটি উন্মুক্ত বন্দিশালা

গাজায় যেমন মুক্ত আকাশের নিচে থেকেও মানুষ বন্দি, তেমনি ভারতশাসিত কাশ্মীরও এক ধরনের খোলা কারাগারে পরিণত হয়েছে। এখানে স্বাধীনতা শব্দটি কেবল কথার অলংকার মাত্র—বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে। পাহাড়-ঘেরা এই ভূখণ্ডে রয়েছে সেনাবাহিনীর অতিরিক্ত উপস্থিতি, বারবার কারফিউ, মতপ্রকাশের কণ্ঠরোধ এবং স্থায়ী নিরাপত্তা নজরদারি।

২০১৯ সালে ভারতের সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের পর থেকে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলুপ্ত হয়। সেই সঙ্গে আরো বেশি নিয়ন্ত্রণমূলক নীতির মুখে পড়ে অঞ্চলটি। সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতিও বলেছিলেন—কাশ্মীর যেন এমন এক জায়গা, যেখানে সবকিছু নজরদারিতে, মানুষের বাক-স্বাধীনতা নেই, এবং প্রতিনিয়ত দমনমূলক ব্যবস্থার শিকার হতে হয়।

কাশ্মীরের জনজীবনে আজ স্বাভাবিকতা বলতে কিছু নেই। মুফতির ভাষায়, এখানকার মানুষ যেন মুক্ত আকাশের নিচে থেকেও দম নিতে পারছে না। সরকার যা বলছে, তার পেছনে নিরাপত্তার যুক্তি থাকলেও, বাস্তবতা হলো—এটা একটি শাসনব্যবস্থা যেখানে অধিকার নয়, বরং নিয়ন্ত্রণই মুখ্য।

কাশ্মীরের সংকট সাম্প্রতিক নয়। এর শেকড় পৌঁছে আছে ১৯৪৭ সালের দেশভাগ পর্যন্ত। ভারত-পাকিস্তানের বিভাজনের পর জম্মু ও কাশ্মীর ভারতের সঙ্গে যুক্ত হলে শুরু হয় দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক ও সামরিক দ্বন্দ্ব। এরপর একাধিক যুদ্ধ, সংঘর্ষ, এবং ধাপে ধাপে বাড়তে থাকা সেনা উপস্থিতি জম্মু ও কাশ্মীরকে কার্যত একটি সুরক্ষিত ব্যারাকে রূপ দেয়।

বর্তমানে অঞ্চলটিতে ৭ থেকে ৮ লাখ ভারতীয় সেনা মোতায়েন রয়েছে, যা দেশটির অন্য যে কোনো রাজ্যের তুলনায় অনেক বেশি। পুলিশের পাশাপাশি আধাসামরিক বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাও এখানে দৃষ্টান্তহীন সক্রিয়।

৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের পর কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে রূপান্তরিত হওয়া কাশ্মীরে রাজনৈতিক অধিকার, সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য এবং সামাজিক স্বাধীনতা ক্রমাগত সংকুচিত হচ্ছে। বহু কাশ্মীরি মনে করেন—তাদের আত্মপরিচয়কেই যেন মুছে ফেলা হচ্ছে।

একটি স্থানীয় মানবাধিকার সংস্থার পরিসংখ্যান আরও ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে: সাত দশকে ১,৬৫,৪০০ বেসামরিক নাগরিক গ্রেপ্তার, ১,১০,৪৯৮টি ঘরবাড়ি ধ্বংস, ১,০৭,৮৮০ শিশু এতিম, প্রায় ২৩ হাজার নারী বিধবা, এবং ৯৬ হাজারের বেশি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। এর বাইরে রয়েছে হাজার হাজার গুম, হেফাজতে মৃত্যু এবং ধর্ষণের অভিযোগ।

কাশ্মীর এখন আর শুধুই একটি রাজনৈতিক ইস্যু নয়, এটি মানবাধিকারের এক গভীর সংকটের নাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *