কারসাজির ফলে মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ৩০ টাকা।

স্টাফরিপোর্টার, দেশী বার্তা।

কারসাজির ফলে মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ৩০ টাকা।
সংগৃহিত ছবি ( পেয়াজ )

পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন (আইপি) না দেওয়ায় বাজারে শুরু হয়েছে ব্যাপক কারসাজি। মাত্র পাঁচ দিনের মধ্যে কেজিপ্রতি দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। রাজধানীর অভিজাত এলাকার বাজার ও পাড়ার দোকানগুলোতে এ দাম আরও বেশি।

আমদানিকারকদের দাবি, সরবরাহ কম থাকায় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। তবে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা মনে করছেন, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে বাজারে দাম বাড়ানো হচ্ছে।

অক্টোবর মাসে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে এ বছর পেঁয়াজ রোপণে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। ফলে নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসতেও সময় লাগতে পারে। বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত না করা গেলে পেঁয়াজের দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমদানিকারকদের মতে, পেঁয়াজ আমদানির আইপি (অনুমতি) না দিলে সামনের দিনে বাজার আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় এখন পুরোপুরি স্থানীয় উৎপাদনের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে। মৌসুমের শেষদিকে মজুত কমে যাওয়ায় দাম বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে।

তাদের আরও বক্তব্য, দীর্ঘদিন ধরে মাচায় সংরক্ষিত থাকার কারণে পেঁয়াজ শুকিয়ে ওজন কমে যায়। ফলে ব্যবসায়ী ও কৃষকরা মুনাফা রক্ষায় পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম কিছুটা বাড়িয়ে বিক্রি করছেন, যা সামগ্রিকভাবে বাজারমূল্য বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলছে।

কারওয়ানবাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা শাহীন মিয়া জানান, আড়ত থেকেই এখন পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে কেজিপ্রতি ১০০ থেকে ১০৪ টাকায়। সরবরাহ কমে যাওয়ায় দামের ঊর্ধ্বগতি দেখা দিয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

অন্যদিকে, পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আব্দুল কাদেরের মতে, বাজারে পরিকল্পিতভাবে দাম বাড়ানো হচ্ছে। তার ভাষায়, “সরবরাহ কমলে সাধারণত কয়েক টাকার পার্থক্য হয়, কিন্তু মাত্র পাঁচ দিনে কেজিপ্রতি ৩০ টাকা বেড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক ও সন্দেহজনক।”

রাজধানীর শ্যামবাজারের এক আড়তদার বলেন, দেশীয় পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুত থাকা সত্ত্বেও কিছু আমদানিকারক ভারত থেকে পেঁয়াজ আনার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তাদের একটি সিন্ডিকেট কৃত্রিমভাবে দাম বাড়িয়ে আমদানির পথ খুলে দিতে চাইছে।

নয়াবাজারের বিক্রেতা আবুল কালাম জানান, এতদিন দেশীয় পেঁয়াজের সরবরাহ ভালো থাকলেও এখন মোকামগুলোয় সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাজারে এর প্রভাব পড়ছে।

হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, বিপুলসংখ্যক আমদানিকারক আবেদন করলেও সরকার আইপি (আমদানির অনুমতি) দিচ্ছে না, ফলে বাজারে দাম দ্রুত বাড়ছে। তার দাবি, যদি সরকার অনুমতি দেয়, তবে তিন-চার দিনের মধ্যেই দাম ৫০ টাকার মধ্যে নেমে আসবে।

কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস. এম. নাজের হোসাইন বলেন, দেশে পর্যাপ্ত উৎপাদন থাকা সত্ত্বেও ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছে। তিনি মনে করেন, এ ধরনের কারসাজি রোধে সরকারকে দ্রুত ও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে, না হলে পেঁয়াজ সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, পেঁয়াজ আমদানির আইপি দেওয়ার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণভাবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিবেচনাধীন। তারা বাজার পরিস্থিতি, কৃষকের স্বার্থ এবং উৎপাদনের অবস্থা পর্যালোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেন। অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইংয়ের অতিরিক্ত উপপরিচালক (আমদানি) বনি আমিন খান বলেন, “আইপি দেওয়া রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত; বাণিজ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয় অনুমতি না দিলে আমরা দিতে পারি না।”

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইং বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক (মনিটরিং ও বাস্তবায়ন) ড. মো. জামাল উদ্দীন বলেন, “বর্তমান দামের এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধি মূলত কারসাজি চক্রের ফল। আইপি না দেওয়ার সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বাজারে প্রভাব বিস্তার করছে।”

তিনি আরও জানান, কয়েক দিনের মধ্যেই পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল হবে, কারণ এখনো কৃষকদের হাতে প্রায় চার লাখ টন পেঁয়াজ মজুত রয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে গ্রীষ্মকালীন ও মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে আসবে, ফলে সংকটের আশঙ্কা নেই।

বাজার সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে ড. জামাল বলেন, “যারা আগে বাজারে প্রভাব বিস্তার করত, তারাই আবার সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। তবে কৃষকরা যথেষ্ট পেঁয়াজ হাতে রাখায় তারা বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হবেন বলে আশা করা যায়।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *