
বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ গত কয়েক মাসে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে দেশ বিদেশি ঋণে প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি করেছে, যার প্রধাণ অংশ সরকারি খাতের ঋণ। জুন শেষে বিদেশি ঋণের মোট পরিমাণ ১১২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
বাংলাদেশ মূলত আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা যেমন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাইকা, এআইআইবি থেকে ঋণ গ্রহণ করেছে।
বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হওয়ায় দেশে দীর্ঘদিন ধরেই ডলারের সংকট দেখা দিচ্ছিল। পূর্ববর্তী সরকারের সময়ে এই সংকট সামাল দিতে আমদানি নিয়ন্ত্রণ এবং বিদেশি ঋণ বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রিজার্ভের পতন ঠেকাতে সক্ষম হয়েছে। প্রবাসী আয়ের বৃদ্ধি এবং কাঙ্ক্ষিত ঋণ প্রাপ্তি দেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা এনেছে।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেছেন, “সরকারি ঋণের অংশ সবচেয়ে বেশি। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ঋণ প্রয়োজন। তবে অতীতে অপচয় হওয়া ঋণ যদি রোধ না করা হয়, তা অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করবে। সঠিকভাবে ঋণ ব্যবহার করা হলে তা পরিশোধের সক্ষমতা তৈরি করবে।”
তিনি আরও বলেন, “জিডিপি অনুপাতে বিদেশি ঋণ এখনও সহনীয়। তবে বৈদেশিক মুদ্রার আয়ের তুলনায় সুদ এবং মূল ঋণের পরিশোধ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সামগ্রিকভাবে স্থিতিশীল মনে হলেও পরিশোধের সময়ে চাপ থাকবে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুন শেষে বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ১১২ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার। মার্চের শেষে এটি ছিল ১০৪ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ তিন মাসে ঋণ বেড়েছে ৭ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার।
সরকারি খাতের বিদেশি ঋণের স্থিতি জুনে ৯২ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার, যা মার্চে ছিল ৮৪ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন। বেসরকারি খাতের ঋণের স্থিতি সামান্য কমে ১৯ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।
বেসরকারি খাতের ঋণ কমার কারণ হলো স্বল্পমেয়াদি ঋণ বৃদ্ধি পেলেও বাণিজ্যিক ঋণের পরিশোধ বেশি হয়েছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, “দেশি উৎসের তুলনায় বিদেশি ঋণের সুদের হার কম। তবে যাদের বৈদেশিক মুদ্রায় আয় নেই, তাদের ঋণ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া উচিত নয়।”
ঋণের পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০০৬ সালের শেষে বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল প্রায় ১৯ বিলিয়ন ডলার। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরে এটি বেড়ে ২১ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার হয়। এরপর আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনামলে ঋণ ৮২ বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পেয়ে ১০৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়।