
সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও আরামিট গ্রুপের মালিক সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বড় ধরনের অভিযোগ এনেছে। ২৫ কোটি টাকা ভুয়া ঋণ নিয়ে আত্মসাতের ঘটনায় দুদক বুধবার (২৪ জুলাই) তার এবং তার স্ত্রী রুকমীলা জামানসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে।
দুদকের উপপরিচালক মো. মশিউর রহমান খান ঢাকার সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ মামলাটি দায়ের করেন। অভিযোগ অনুযায়ী, সাইফুজ্জামান ও তার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের সহযোগিতায় একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠান ভিশন ট্রেডিং-এর নামে ইউসিবি ব্যাংক থেকে ভুয়া ঋণ অনুমোদন করে টাকা আত্মসাৎ করা হয়।
অভিযুক্তদের তালিকায় রয়েছেন:
- সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রী রুকমীলা জামান
- ইউসিবি ব্যাংকের সাবেক ও বর্তমান উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা
- আরামিট গ্রুপভুক্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা
মামলার নথি অনুযায়ী, ভিশন ট্রেডিং নামে কোনো বাস্তব প্রতিষ্ঠান নেই। এটি কেবলমাত্র নামসর্বস্ব একটি কোম্পানি, যার মালিক দেখানো হয়েছে আরামিট গ্রুপের এক কর্মচারীকে। ব্যাংকের শাখা কর্মকর্তা ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যাচাই-বাছাই না করেই ঋণ অনুমোদন করেন এবং অর্থ একাধিক ভুয়া প্রতিষ্ঠানের হিসাবে সরিয়ে দেওয়া হয়—যা সাইফুজ্জামান চৌধুরীর কর্মচারীদের নামে খোলা।
যেভাবে টাকা আত্মসাৎ হয়:
ঋণের অর্থ বিতরণ হয় নিম্নোক্ত নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানে:
- আলফা ট্রেডিং
- ক্লাসিক ট্রেডিং
- মডেল ট্রেডিং
- ইম্পেরিয়াল ট্রেডিং
এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকানা আরামিট গ্রুপের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে, তবে নিয়ন্ত্রণে ছিল সাইফুজ্জামানের।
অতীতেও দুর্নীতির অভিযোগ:
এর আগে ২০২৪ সালের ১৭ এপ্রিল, ইম্পেরিয়াল ট্রেডিং, ক্লাসিক ট্রেডিং ও মডেল ট্রেডিংয়ের নামে ভুয়া ঋণের মাধ্যমে ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আরেকটি মামলা দায়ের করেছিল দুদক। ওই ঋণের অর্থ ইন্টারন্যাশনাল লিজিং-এ নেওয়া আরামিট সিমেন্টের পুরনো ঋণ পরিশোধে ব্যবহার করা হয়েছিল।
বিদেশে ৫০ কোটি ডলারের সম্পদ!
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে আল-জাজিরা প্রকাশ করে, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বিশ্বজুড়ে রয়েছে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলারের সম্পদ। যুক্তরাজ্যেই তার রয়েছে ৩৬০টি বাড়ি। এই রিপোর্টের ভিত্তিতে দুদক তদন্ত শুরু করে।
এরপর থেকেই ধাপে ধাপে আদালতের আদেশে সাইফুজ্জামান ও তার পরিবারের নামে থাকা:
- ৩৪৩টি বাড়ি যুক্তরাজ্যে
- ২২৮টি সম্পত্তি সংযুক্ত আরব আমিরাতে
- ৯টি বাড়ি যুক্তরাষ্ট্রে
এসব সম্পত্তি ক্রোক ও ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করার নির্দেশনা জারি হয়।
এছাড়া, ১০২ কোটি টাকার শেয়ার, ৯৫৭ বিঘা জমি জব্দ করা হয়েছে।
২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর, আদালত তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, তারা অনেক আগেই দেশ ছেড়েছেন।